অনেক দূর থেকেও হাশেমের চোখে পড়েছে ইমরোজ নামাজে দাঁড়িয়েছে আবুল কাসেমের সাথে। হাশেম অনেকক্ষণ দেখে ওদের। আজকে ইমরোজকে আনন্দিত দেখে মনটা ভরে গেলেও হাশেমের মন বলছে এতো সহজে কোনকিছুই হবেনা। ভালোমানুষ দের সাথে আল্লাহ্ থাকেন কথাটা সত্যি কিন্তু একই সাথে ভালো মানুষেরাই সবচেয়ে কষ্টে থাকে। তাদের উপর পাহাড় সমান পরীক্ষা চাপিয়ে দেন আল্লাহ্তায়ালা। হাশেম জানে এই দুজন মানুষের সামনে পরীক্ষার বিশাল পাহাড় দাড়িয়ে। হাশেমের চোখ যায় মুসফিকুর রহমানের কক্ষের দিকে। যদিও ওই রুম একটু আড়াল করা তারপরও বোঝা যাচ্ছে ঘরে আলো জ্বলছে। ভিআইপি রুমে থাকলেই ভিআইপি ঘুম হয়না। ঘুম হচ্ছে আল্লাহর আরেক নেয়ামত। যা সবার ভাগ্য থাকেনা।
হাশেম ভাই ঘুমান নাই? কে, কে? আলী অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে বলে ভয় পাইছেন? আমি আলী। তুমি এতো রাতে এখানে কি করো? আলী এসে পায়ের কাছে বসে ঘুম আসেনা ভাই। হাশেম, আলীর পিঠে হাত রেখে বলে মনটা কি অস্থির?
হাশেম ভাই একটা কথা বলি? কাউকে বইলেন না। আমি না রাতে ঘুমাতে পারিনা। যে লোকগুলোরে ফাঁসি দিছি শুধু ওদের চারপাশে দেখি। আমার কাছে এসে বলে আলী ভাই পানি দেন, গলা শুকায় আছে। তাদের গলায় ফাঁসের দড়ি। আমার কাছে মাঝে মাঝে পাগলের মতো লাগে। এতো পানি আমি কই পাবো বলেন দেখি? আমার না আর ফাঁসি দিতে মন চায়না। আগে হাত কাঁপতো না, এখন কাঁপে। আমি আর ফাঁস দিতে চাইনা হাশেম ভাই। আলী কাঁদতে থাকে।
ফারজানা মিতু
বইমেলা ছাড়াও যারা সারা বছর লেখালেখি করে ফারজানা মিতু তাদের অন্যতম। ১১ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া এই মানুষটির যত আবেগ সবটুকুই এই লেখালেখি। পর পর চার বছরে ২৭টি বইয়ে তিনি তার জাত চিনিয়েছে পাঠককে। তার পরকীয়াসহ অন্যান্য বই যারা পড়েছেন তারা জানেন ফারজানা মিতুর লেখা সম্পর্কে। কবিতা দিয়ে শুরু হলেও এখন একাধারে লিখে চলেছেন উপন্যাস। দেশের প্রায় সব শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় লিখে চলেছেন গল্প, কবিতা কিংবা প্রবন্ধ। লেখালেখির পাশাপাশি সামাজিক সচেনতামূলক বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে তিনি রাজপথের সৈনিক। ঘুরে বেড়িয়েছেন ৩৫টিরও বেশি দেশ। মানুষের সঙ্কীর্ণতা তাকে অবাক করে তাই নিজেকে সবসময় রাখতে চেয়েছেন সব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে কারণ একজন লেখকের চোখ আর দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে স্বচ্ছ এটাই তার বিশ্বাস। মিতুর বইয়ের প্রধান উপকরণ যা পাঠককে টানে সেটা হচ্ছে— সহজ সাবলীল কথা। মিতু এমন ভাবেই কথা নিয়ে খেলেন, যা পড়ে পাঠক কখনও হাসবেন আবার কখনও কষ্টে নীল হবেন। মিতুর বই মানে কল্পনার অস্থির জগতে স্নান। আমন্ত্রণ থাকল সেই স্নান ঘরে আবারও কষ্টের নীলে নীল হবার।