ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ এ বই কিশোর-কিশোরীদের জন্যে, তরুণ-তরুণীদের জন্যে। এই বই আনন্দের জন্যে, এই বই আলোকপ্রাপ্তির জন্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এক বহুমুখী প্রতিভার নাম, অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠক, জনপ্রিয় টিভি-উপস্থাপক, প্রাবন্ধিক, কবি, গল্পকার, অনুবাদক, নাট্যকার-তাঁর পরিচয়ের শেষ নেই। কিন্তু আরো একটা কারণে তাঁর পরিচয়ের শেষ নেই। কিন্তু আরো একটা কারণে তাঁর খ্যাতি দেশজোড়া, অসাধারণ বাগ্মী তিনি; তাঁর বক্তৃতা পাণ্ডিত্য, সরসতায়, সৌন্দর্যে অপূর্বতায় উজ্জ্বল। এই বইয়ে থাকলো প্রধানত স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সামনে দেওয়া বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁর বক্তৃতাগুলো। হাসির ছটা দিয়ে বক্তৃতাগুলো মুরু হয়েছে সাধারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্পচ্ছলে বক্তা ঢুকে গেছেন বিষয়ের গভীরে, কেবল তত্ত্বকথা নয়, জীবনরসিকের জীবনাভিজ্ঞতার আলোয় ঋদ্ধ এই বক্তৃতাগুলো। আছে সাধারণ কৌতুক থেকে শুরু করে মনীষীদের জীবনের সত্য ঘটনার উল্লেখ, আছে কবিতা কিংবা সাহিত্যের উজ্জ্বল উদ্ধৃতি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা রণদাপ্রসাদ সাহার মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বক্তৃতাও ঠাঁই পেয়েছে এই দুই মলাটের মধ্যেই-যে ভাষণের উদ্দিষ্ট শ্রোতাদের সবাই হয়তো তরুণও নয়।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নিজের অন্তর জুড়ে আছে ভালোবাসা-বেদনা, এই সমাজের জন্যে, এই রাষ্ট্রের জন্যে, মানবতার জন্যে, তাই তিনি নিরলসকর্মী, কর্মিষ্ঠ ভাবুক, অনলস লেখক, নাছোড় সমাজহিতৈষী-নিজে কাজ করে চলেছেন বলে তাঁর এই বক্তৃতামালা কেবল বাগাড়ম্বর বলে ধরার ধুলায় হারিয়ে যাবার নয়। এই বইয়ের পাঠ তাই বদলে দিতে পারে একজন তরুণের জীবন, তাকে জাগিয়ে তুলতে পারে ভারোবাসায়-বেদনায়।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপনা করেছেন তিনি তিরিশ বছর-১৯৬২ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত । অধ্যাপক হিশেবে তার খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে সাহিত্য পত্রিকা 'কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বহমান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিমান ও বিনোেদন-সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিশেবে আবির্ভূত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনােদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। এইসব ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চায় নিবিষ্ট। কবিতা, প্রবন্ধ, ছােটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জর্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডারও যথেষ্ট সমৃদ্ধ তাঁর। প্রকাশিত গ্রন্থ ২৭টি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সবগুলাে দিক সমন্বিত হয়েছে তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায় । তিনি অনুভব করেছেন যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তােলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়ােজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। ‘আলােকিত মানুষ চাই’-সারা দেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিশেবে সাতাশ বছর ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। ২০০০ সাল থেকে সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য তিনি দেশব্যাপী অভিনন্দিত হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরােধ আন্দোলন, পরিবেশ ও সুশীল সমাজ আন্দোলন তার নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, পিতা আযীম উদ্দিন আহমদ; মা বেগম করিমউনিসা জন্মস্থান : পার্ক সার্কাস, কলকাতা। জন্মসাল : ২৫ জুলাই ১৯৪০। পৈতৃক নিবাস : কামারগাতি, কচুয়া, বাগেরহাট। পুরস্কার : জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রােটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার : (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), শেলটেক পদক (২০০৬), মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক (২০০৬)।