বনের খবর বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্য স্মৃতিকথা। সার্ভেয়ার প্রমদারঞ্জন রায় ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত বন-অরণ্য থেকে শুরু করে মরুভূমির মতো অঞ্চলে জরিপকালীন সময়ে বিভিন্ন লোমহর্ষক ও আনদন্দ-বেদনা-দায়ক স্মৃতিকথা নিয়ে লেখা বনের খবর। সার্ভেয়ার হিসেবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম, বার্মা, আসামের নিবিড় অরণ্য ও বেলুচিস্তানের পাথুরে কঠোর জীবনের গল্পগুলো নিজের ভাষাতে তুলে এনেছেন। প্রায় একশ বছর আগের বন-জঙ্গল ও সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন উপজাতির জীবনধারা কথাও রয়েছে এখানে। মাত্র একশ বছরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেই সব বনাঞ্চল ও হারিয়ে যাওয়া উপজাতিদের জীবন যেন এখন অনেকটা রূপকথার মতো। ১৯২০ সালের পরে বনের খবর পুস্তক আকারে প্রকাশ পেলেও এর পূর্বে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সম্পাদিত সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে এই কিছু পর্ব ছাপা হয়েছিল। দুর্গম ও সবুজ অরণ্যের গভীরে হারিয়ে যেতে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য তো বটেই, সকল বয়সী পাঠকের জন্য বনের খবর অবশ্য পাঠ্য একটি বই। চলুন তবে ঘুরে আসা যাক, সার্ভেয়ার প্রমদারঞ্জন রায়ের সাথে একশ বছর আগের বনের খবর থেকে।
প্রমদারঞ্জন রায়
প্রমদারঞ্জন রায়ের জন্ম মসুয়া, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ। পিতা কালীনাথ রায়। তিনি ছিলেন আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। আর সুদর্শন। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। তাঁর আট সন্তানের মধ্যে উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন তৃতীয়। উপেন্দ্রকিশোরের পৈতৃক নাম কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন। তখন তাঁর নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১০ই মে, ১৮৬৩-২০শে ডিসেম্বের, ১৯১৫)। প্রমদারঞ্জন রায় (১৯শে জুন, ১৮৭৪-১৯৪৯)। তিনি পিতার আট সন্তানের মধ্যে কততম তা জানায় যায়নি। তিনি কোলকাতা মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউট থেকে এন্ট্রাস (বর্তমান দশম শ্রেণি), মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে এফ.এ. এবং শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সার্ভে পাস। সরকারি জরিপ বিভাগে চাকরি ও এই বিভাগে জরিপের কাজে বেলুচিস্তান, শ্যাম ও বার্মায় কাজের অভিজ্ঞতা বড় ও ছোটদের উপযোগী সহজ-সরল ভাষায় লেখেন। সম্ভবত ১৯১৩ সাল থেকে উপেন্দ্রকিশোর সম্পাদিত সন্দেশ পত্রিকায় তিন বছর ধারাবাহিক লিখতে থাকেন। এছাড়াও সন্দেশ পত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। পরে এই বিখ্যাত সন্দেশ পাত্রিকা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান সুকুমার রায় (৩০শে অক্টোবর, ১৮৮৭-১৯২৩) কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে বহু বছর প্রকাশ পায়। তাঁর আবোল-তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে সর্বযুগের সেরা ‘ননসেন্স’ ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম।