আমাদের কবিতায় শামসুর রাহমানের প্রধান কাজ হলাে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলা কবিতায় তিরিশের যে ঘনঘটার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাকে বহুধা বিস্তৃত করা। প্রথম গ্রান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে বইটি শামসুর রাহমান প্রেম ও প্রকৃতিতে মগ্ন হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তখন পর্যন্ত তার কবিতায় জীবনানন্দ দাশের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শামসুর রাহমানের কবিতা হয়ে ওঠে গণমানুষের প্রাত্যহিক, রাজনৈতিক বিক্ষোভ এবং মিছিলের অগ্রবর্তী মানুষের আবেগে উদ্বেল। এটা শামসুর রাহমান কীভাবে ঘটিয়েছিলেন, তা আমি এখনাে বিশ্লেষণ। করে দেখিনি। তবে তিনি তা ঘটিয়েছিলেন। ‘আসাদের শার্ট’, ‘সফেদ পাঞ্জাবী’, ‘স্বাধীনতা তুমি’- এসব কবিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিচিতি শামসুর রাহমানের জন্য তৈরি করে দেয়। এই পরিচিতির পূর্ণতা তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘটে গেছে। তার মতাে কবি সহজে আবির্ভূত হবেন, এমন আশা করা যায় না। কথা হলাে শামসুর রাহমানের কাব্য। মানুষের হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে।
শামসুর রাহমান
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানা থেকে আরেকটু ভেতরে মেঘনাপাড়ের গ্রাম পাড়াতলী। কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক নিবাস। তবে জন্মেছিলেন ঢাকা শহরের ৪৬ নম্বর মাহুতটুলির বাড়িতে। তারিখ ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর। দশ ভাইবােনের মধ্যে জেষ্ঠ্য তিনি।
১৯৪৮ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর তখন মননের গহীন তল্লাটে কবিতার যে আবাদভূমি গড়ে উঠেছিল, তা কেবল উর্বরই হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে নলিনীকিশাের গুহের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা। তারপর দে ছুট আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়েছেন আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), সাংবাদিকতার জন্যে পেয়েছেন জাপানের মিৎসুবিশি পদক (১৯৯২), ভারতের আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪) ছাড়াও বহু পুরস্কার। তিনি ভারতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ‘মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে যে চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন, একই পেশায় থেকে ১৯৮৭ সালে দৈনিক বাংলার সম্পাদক পদ থেকে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। জীবনে উত্থান-পতন, দারিদ্র্য, হতাশার ঘুর্ণিপাকে দুলেছেন, তবু খেই হারাননি জীবন, সাহিত্য ও কবিতার পাঠ থেকে।
মূলত কবি হলেও সাহিত্যে তাঁর কাজ বহুমাত্রিক। অনুবাদ সাহিত্য থেকে গদ্যের বিভিন্ন প্রশাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে তিনি। মৃত্যুবরণ করেন।