দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা, জাপানি সৈন্যরা গ্রেনেড পুতে রাখতে মাটির নিচে, আর গ্রেনেডের পিনের সাথে বেঁধে আকর্ষণীয় নানান জিনিস ছড়িয়ে রাখতাে মাটির উপর, কেউ কোনাে আগ্রহে সেসব তুলতে গেলেই বিস্ফোরিত হতাে গ্রেনেড গুলাে। অনেক গ্রেনেডের পিনের সাথে কলম বেঁধে রেখেছিল তারা, মাটি থেকে সেইসব কলম তুলতে গিয়ে কত মানুষের দেহ যে মুহূর্তেই কয়েকখণ্ড হয়ে গেছে। সে হিসাব আমি জানি না। আমিও তেমনি এক কলমের দিকে ছুটছি, সেই কলমের দিকে ভ্রমণের স্মৃতিগুলােই আমার কবিতা। একবার যদি তুলে ফেলতে পারি সে কলম, তারপর? সেই কলমের দিকে ছুটতে ছুটতে আমি জেনেছি পৃথিবীতে একই সময়ে উদ্ভাবন হয়েছে বন্দুক এবং ছাপাখানা। দেখেছি বন্দুক ব্যবহার করেছে ছাপাখানাকে চিরকাল। আমিও ছাপাখানাকেই ব্যবহার করছি, তফাৎ শুধু- আমি ব্যবহার করছি বন্দুকের বিরুদ্ধে। ১৯৬৪ সাল, ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধের অগ্রাসন চলছে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা অনেকেই জানেন, জানেন। ভিয়েতনামের পাশের দেশ ‘লাওস’তে আমেরিকা গােপন যুদ্ধের কথা। গােপন যুদ্ধ বলছি কারণ, তৎকালীন বিশ্বের খুব কম মানুষই লাওসের যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে জানতাে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউনিস্ট গেরিলাদের সামরিক রসদের যােগান আসতাে লাওসের ভেতরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা, জাপানি সৈন্যরা গ্রেনেড পুতে রাখতে মাটির নিচে, আর গ্রেনেডের পিনের সাথে বেঁধে আকর্ষণীয় নানান জিনিস ছড়িয়ে রাখতাে মাটির উপর, কেউ কোনাে আগ্রহে সেসব তুলতে গেলেই বিস্ফোরিত হতাে গ্রেনেড গুলাে। অনেক গ্রেনেডের পিনের সাথে কলম বেঁধে রেখেছিল তারা, মাটি থেকে সেইসব কলম তুলতে গিয়ে কত মানুষের দেহ যে মুহূর্তেই কয়েকখণ্ড হয়ে গেছে। সে হিসাব আমি জানি না। আমিও তেমনি এক কলমের দিকে ছুটছি, সেই কলমের দিকে ভ্রমণের স্মৃতিগুলােই আমার কবিতা। একবার যদি তুলে ফেলতে পারি সে কলম, তারপর? সেই কলমের দিকে ছুটতে ছুটতে আমি জেনেছি পৃথিবীতে একই সময়ে উদ্ভাবন হয়েছে বন্দুক এবং ছাপাখানা। দেখেছি বন্দুক ব্যবহার করেছে ছাপাখানাকে চিরকাল। আমিও ছাপাখানাকেই ব্যবহার করছি, তফাৎ শুধু- আমি ব্যবহার করছি বন্দুকের বিরুদ্ধে। ১৯৬৪ সাল, ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধের অগ্রাসন চলছে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা অনেকেই জানেন, জানেন। ভিয়েতনামের পাশের দেশ ‘লাওস’তে আমেরিকা গােপন যুদ্ধের কথা। গােপন যুদ্ধ বলছি কারণ, তৎকালীন বিশ্বের খুব কম মানুষই লাওসের যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে জানতাে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউনিস্ট গেরিলাদের সামরিক রসদের যােগান আসতাে লাওসের ভেতরকার ‘হাে চি মিন ট্রেইল’ নামক রাস্তা দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এই রসদ সরবরাহের রাস্তা বন্ধ করতে লাওসে ব্যাপক বােমাবর্ষণ শুরু করে, যার মােট পরিমাণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত মােট বােমার থেকেও বেশি। সব বােমাই লাওসের মাটিতে বিস্ফোরিত হয়েছে এমন নয়, কিছু অবিস্ফোরিত ও ছিল। একটা গ্রাম আছে লাওস’তে। বান নাপিয়া। যুদ্ধের শেষে সেই গ্রামের মানুষেরা তাঁদের গ্রামে অবিস্ফোরিত বােমার খােলসগুলাে দিয়ে নানান কিছু বানিয়েছে এপর্যন্ত, বানিয়েছে বুদ্ধের মূর্তি শত্রুতার স্মৃতিচিহ্নে।। ৮ মে ১৯৭৪, সকাল ৮ টা ৫ মিনিট। ভারত তাদের তৈরি প্রথম পারমাণবিক বােমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আর সেই বােমার নাম ছিল “স্মাইলিং বুদ্ধা”। এই ঘটনা জানার পর আমি অসহায় দৃষ্টিতে জুই এর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। জুই, সেই মানুষ, যার ধারণা পৃথিবীতে তারচেয়ে বড় শত্রু আমার একটিও নেই, যে কখনাে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বুদ্ধের সাথে আর কখনাে কাছে নিয়ে এসেছে জীবনানন্দ দাশ। আমার সেই শত্রুও অবাক হয়েছিল এই ঘটনা শুনে। পৃথিবীতে একই সময় যখন বােমার খােলসে কেউ এঁকে যাচ্ছে অবিরাম বুদ্ধের ছবি ঠিক তখনই পারমাণবিক বােমা বানিয়ে কেউ তার নাম রাখছে বুদ্ধের নামে। আপনি কোন পক্ষে যাবেন সে সিদ্ধান্ত আপনার। আমি শুধু সেই একটা কলমের পেছনে ছুটতে ছুটতে আমার কথা গুলাে এই বইয়ের কবিতায় বলার চেষ্টায় করেছি।