আপনি কি জানেন, 'আমেরিকান'রা আসলে আমেরিকান নয়? কীভাবে গঠিত হয়েছিল আজকের যুক্তরাষ্ট্র? কীভাবে 'স্বাধীন' হয়েছিল?
জানেন কি, টেক্সাস ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র? সেই স্বাধীন টেক্সাসকে দখল ও আত্মসাৎ করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র? আপনি কি জানেন, মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলের অর্ধেকটাই গ্রাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র? স্বাধীন হাওয়াই রাষ্ট্রকেও আত্মসাৎ করেছে? আপনি কি জানেন, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং আরও অনেক দেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে যুক্তরাষ্ট্র? দেশে দেশে নির্বাচিত সরকার ও গণতন্ত্র উচ্ছেদ করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে? ব্যাপক গণহত্যায় মদদ দিয়েছে?
ইতিহাস নয়, এ বইয়ের উপজীব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাহাজানি ও নাশকতা। কিন্তু এর ঐতিহাসিক পটভূমি জেনে রাখা জরুরি। পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিশ্বের দেশে দেশে চলেছে
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ও রাহাজানি/নাশকতা।
যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ও প্রকাশ্যে অন্যের দেশে হস্তক্ষেপ করে, আক্রমণ করে, আক্রমণের হুমকি দেয়, সরকার উৎখাত করে, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের হত্যা করে, দালাল ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে, পোষ্য সরকার ও সন্ত্রাসবাদী চক্রকে অর্থ ও অস্ত্র দেয়, অন্তর্ঘাত চালায়, দখল করে, সন্ত্রাসবাদীদের লেলিয়ে দেয় এবং সর্বপ্রকার রাহাজানি চালায়। রাহাজানি নিশ্চয়। নইলে এটাকে আপনি কী বলবেন?
আমেরিকা ভূখণ্ডের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রসারণ শুরু হয় ১৮৫৬ সালে গুয়ানো আইল্যান্ডস অ্যাক্টের মাধ্যমে। ওই আইনে ক্যারিবীয় সাগরের ও প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ দখলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুয়াম ও পুয়ের্তো রিকো। ক্যারিবীয় সাগরের ভার্জিন আইল্যান্ডস ১৯১৭ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বাইরেও আরও কিছু অঞ্চল ছিল যুক্তরাষ্ট্র-শাসিত। এ বিষয়ে কথা আর না বাড়াই। যেমন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দাসপ্রথা নিয়েও এখানে আমরা কোনও আলোচনা করছি না। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গে এই দাসপ্রথা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুনিয়া জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র যে রাহাজানি চালিয়ে এসেছে এবং এখনও চালাচ্ছে, সেটার পটভূমি স্পষ্ট করে বুঝতে একটুখানি পিছন ফিরে তাকিয়েছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নয়, আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাহাজানি। তবে তার ঐতিহাসিক পটভূমিটা জেনে রাখা প্রয়োজন।
আমরা বাস করছি সাম্রাজ্যবাদকবলিত এক পৃথিবীতে। এই পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদীরাই রাজত্ব করছে মুক্তবিশ্ব, মানবতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র আর ধর্মের কথা বলে। দেশে দেশে আগ্রাসন, গণহত্যা, জুলুম, স্বৈরতন্ত্র, ষড়যন্ত্র পরিচালনা করে তারাই। মানবতাবিরোধী, আগ্রাসী, দস্যুতামূলক এসব কর্মকাণ্ডের কিছুটা নমুনা হচ্ছে এ বইয়ে বর্ণিত ঘটনাগুলো। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া তাদের চোখ দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখাতে চায় আমাদের। আমরা অনেকে তা-ই দেখি। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ার চোখে নয়, দেখা দরকার নিজের চোখ দিয়ে। সবাই নিজের চোখ দিয়ে দেখুন। নিজের বিবেচনা দিয়ে বিশ্লেষণ করুন। তবেই আমরা প্রকৃত চিত্র দেখতে পাব। তখন ‘সত্য হয়ে চেপে থাকা অনেক মিথ্যা প্রকাশ হয়ে পড়বে ।
বইটি ওপেন-এন্ডেড, অর্থাৎ উন্মুক্ত। পাঠকসমাজ প্রতিক্রিয়া পেশ করতে পারেন অকুণ্ঠচিত্তে। পরবর্তী সংস্করণে বইটির কলেবর বাড়বে, সেখানে পাঠকদের অভিমতও যুক্ত হবে ।
সূচি
➤ আমেরিকার রাহাজানি প্রসঙ্গে দু'চার কথা
➤ যুক্তরাষ্ট্রের রাহাজানি ও নাশকতার খণ্ডতালিকা
➤উন্ডেড নী গণহত্যা
➤ চিলির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত
হাইতি আক্রমণ ও আগ্রাসন : ১৯১৫-১৯৩৪
➤ হাওয়াই আত্মসাৎ
➤ বিভিন্ন দেশে সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: ১৯৪৮-২০১৭
➤ পুয়ের্তো রিকো গ্রাস
➤ দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি
➤ যুক্তরাষ্ট্রের করাল গ্রাসে
➤ দেশে দেশে মার্কিন ঘাঁটি
➤ কিউবা : স্প্যানিশ উপনিবেশ, ব্রিটিশ ও মার্কিন দখলদারিত্ব, স্বাধীনতা, বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ংকর ষড়যন্ত্র
➤ টঙ্কিন উপসাগরের ঘটনা ও ভিয়েতনাম যুদ্ধ
➤ অপারেশন ওয়াশটাব
➤ জীবাণু অস্ত্রের পরীক্ষা: অপারেশন সী-স্প্রে
➤ ফিলিপিন্সে দখলদারিত্ব ও মোরো গণহত্যা
➤ ইরান : গণতান্ত্রিক সরকার উচ্ছেদ, ২৯০জন বিমানযাত্রী হত্যা