ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বর্তমান মানবসভ্যতা, সম্ভবত একশোভাগই বিজ্ঞান নির্ভর। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে হয় না প্রায় কিছুই। অবশ্য তার কারণ এই নয় যে, বিজ্ঞানের প্লাবিত উন্নতি আমাদের জীবনের মুন্দ্রাটির উল্টোদিক। কারণ, সত্যমাত্রই বিজ্ঞান, তবে তা হাতে কলমের সত্য। তা এক কথায় মেনে নেবার বিশ্বাসী না করে বিচার ও যুক্তির কষ্টিপাথরে যা দেখে তার সবই ঘষে। কখনও ঘষে-ঘষে শেষ হয়, কখনও সে ঘর্ষণে আগুনও আসে। সে আগুন সত্যের যা গড়ে তোলে ঐতিহাসিক দাবানল। সত্যকে আবিষ্কার করা কঠিন। কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি কঠিন সেই আবিষ্কৃত সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। বর্তমান সমাজজীবনে যে অভাবটা বেশি প্রকট, তা হলো মূল্যবোধ। আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের সামনে এমন কোন আলো নেই, যা দেখে ওরা সামনের পথে পা বাড়াবে। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের জীবন ও সাধনা তাদের চলার পথে উপযুক্ত আলো ধরবে, লক্ষ্য স্থির করতেও সাহায্য করবে। বিশ্ব-ইতিহাসে যাঁরা মহা বিজ্ঞানীরূপে বন্দিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই এক অন্তর্ভেদী দৃষ্টি ছিল চারপাশের প্রকৃতিগত নিতান্ত সাদামাটা ব্যাপারগুলিকেও খুঁটিয়ে দেখার ছিল অফুরন্ত উদ্যম। আন্তরিক প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্ন নিয়ে নিবিড়ভাবে ভেবে দেখবার মন। এই দৃষ্টি ও মনই তাঁদের উত্তীর্ণ করেছে বিজ্ঞানের জগতে। এই পুস্তুকে এরকমই কয়েকজন বিজ্ঞানী জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, তা হলো এই পুস্তুকে কোনো ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানীর কথা নেই। এর অর্থ এই নয় যে বিশ্ববিজ্ঞানের ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানীদের কোনই অবদান নেই। উপমহাদেশের বেশ কিছু বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের গবেষণা করে সুপ্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বনন্দিত হয়েছেন। আমার পূর্বে লিখিত ‘ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানচর্চা’ এবং ‘প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান সাধক’ শীর্ষক পুস্তক দটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বিধায় এই পুস্তুকে তা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। পাঠকবর্গকে অনুরোধ করবো পুস্তক দু’টি পড়বার জন্যে। বরাবরের মতো আমার সহধর্মিণী ড. দেবশ্রী পাল পুস্তুকটি লেখার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সুন্দরভাবে পু্স্তকটি প্রকাশ করার জন্য প্রকাশককে ধন্যবাদ। আমাদের নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞান সাধনায় দীক্ষিত হোক এই কামনা করি। প্রফেসর ড. নিশীথ কুমার পাল