সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিষবৃক্ষ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিষবৃক্ষের মূল বিষয়বস্তু তৎকালীন দুই সামাজিক সমস্যাকে ঘিরেÑবিধবা ও বহুবিবাহ। বঙ্গদর্শনে প্রথম সংখ্যা থেকে (বৈশাখ ১২৭৯) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় বিষবৃক্ষ। আর পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। বঙ্কিমবাবুর জীবৎকালে উপন্যাসটির ৮টি সংস্করণ বের হয়। এ যাবৎ বিষবৃক্ষ দেশ-বিদেশের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ঞযব চড়রংড়হ ঞৎবব নামে এর ইংরেজি অনুবাদ করেন মিরিয়াম এস. নাইট ১৮৮৪ সালে। সেকালের বিখ্যাত কলিকাতা রিভিয়ু উপন্যাসটির ইংরেজি সমালোচনা প্রকাশ করে বিষবৃক্ষ ছাপার পরপরই। রবীন্দ্রনাথ প্রবাসীতে লিখেছেন : বঙ্গদর্শনে যে জিনিসটা সেদিন বাংলা দেশের ঘরে ঘরে সকলের মনকে নাড়া দিয়েছিল সে হচ্চে বিষবৃক্ষ।... ‘বিষবৃক্ষ’ কাহিনী এসে পৌঁছল আখ্যানে। যে পরিচয় নিয়ে সে এল তা আছে আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উনিশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র,মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী,বঙ্কিমের পূর্বে তাঁর আরও দুই পুত্রের জন্ম হয় – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। মৃত্যু : ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ ।