বিগিনিংস
আসিমভের লেখা দেখে আর দোকানীর অনুরোধে কিনে ফেললাম। কবি সাহিত্যিক মানুষ অনুবাদ করেছেন তাই বেশি একটা উচ্চাশা করিনি। ভেবেছিলাম অনুবাদ তেমন ভাল হবে না। কিন্তু এনায়েত রসুলের অনুবাদে আমার মন ভরে গেছে। 🙂 অসাধারণ অনুবাদ করেছেন তিনি। অনুবাদক অনেক যত্ন করে অনুবাদ করেছেন। দারুণ হয়েছে অনুবাদটা। দারুণ ভাল লেগেছে পড়তে। বইটার সবিটাই বিজ্ঞানের নানা উৎপত্তিমূলক প্রশ্নের উত্তরে সাজানো হয়েছে। যেমন প্রাণের শুরু হল কখন থেকে, ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি, ভাইরাস, মহাদেশ, পানি, নানা বর্গের প্রাণিবৈচিত্র্য, পৃথিবী, সৌরজগত, বিশ্বজগত ইত্যাদি। এসবের কীভাবে উৎপত্তি হল তা নিয়ে আলোচনা। বইটার মজার দিক হল একটা প্রশ্নের সমাধান হলে আরেকটা প্রশ্নের দেখা দেয়। সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে পরের অধ্যায়। এভাবে পরের অধ্যায়ের শেষেও এমন প্রশ্নের দেখা দেয় এবং সে প্রশ্ন নিয়ে আরও একটি অধ্যায়। এভাবে সমস্যার পিঠে সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে বইটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। প্রজাতির সমস্যার সমাধান হলে, গণ; গণের হলে গোত্র; এভাবে গণ, রাজ্য সব। এরপর আসে প্রথম প্রাণ। ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস। প্রাণের জন্য পানি। এরা কোথা থেকে আসলো। উন্নত প্রাণের জন্য অক্সিজেন? কীভাবে অক্সিজেনের শুরু হল, কেমন করে উৎপত্তি হল। ফসিল, সভ্যতা, জ্ঞানের ইতিহাস এমনকি ধর্মের কথাও আছে। বিজ্ঞান নিয়ে ধর্মীয় বিতর্ক সবই ঠাই পেয়েছে। বইটির বেশিরভাগ অংশ জুড়ে প্রাণ বা প্রাণীজগতের ইতিহাসই আলোচিত হয়েছে। শেষের দিকে এসে মহাদেশ, পানি, অক্সিজেন, প্রাণ-বান্ধব পরিবেশ ইত্যাদি আলোচনা করেছেন। তবে এই অংশটা অল্প। আর এটাই বেশি মজার। এই বইয়ের মহাদেশ সম্পর্কিত অধ্যায়টা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। মহাদেশের হেঁটে চলা বা মহাদেশীয় সঞ্চরণ নিয়ে একসময় সামান্য লেখালেখি করেছিলাম, মনে মনে ভাবতাম এ নিয়ে আমি সামান্য কিছু জানি। বইয়ের এই অধ্যায় পড়ার পর মনে হল আমি কিছুই জানি না। আমাকে আরও জানতে হবে এবং জেনে তারপর লিখতে হবে। ইংরেজি টার্মগুলোর শতভাগ সঠিক অনুবাদ না হলেও অনেক কাছাকাছি চলে আসতে পেরেছেন। বুঝা যায় অনুবাদক অনুবাদের সময় অনেক যত্নশীল ছিলেন। কিছু কিছু শব্দ কলেজে যে যে বাংলা হরফে পড়েছিলাম এই বইতে সেরকম নেই অনেক জায়গায়। মূলত শব্দগুলো ইংরেজি না হওয়াতে এই সমস্যাটা হয়েছে। এমন সময় সাবলীলে পড়ে যেতে সমস্যা হয়। কিছু কিছু ইংরেজি হরফের গ্রিক বা ল্যাটিন শব্দগুলোতে এমনটা হয়েছে বেশি। বাংলাটা পড়ে গেলে বোঝারই উপায় নেই কিসের কথা বলা হচ্ছে। ইন্টারমিয়িডিয়েটে প্রাণিবিদ্যা বইটা বেশ ভালোভাবে (অন্য বইয়ের তুলনায় সবচে ভালোভাবে) পড়েছিলাম বলে এই টার্মগুলো দিয়ে কাদের বোঝানো হচ্ছে বুঝতে পেরেছিলাম। শব্দগুলো মার্ক করে রাখিনি তাই এখানে তুলে দিতে পারলাম না। প্রথম দিকে ভুল ধরার মনোভাব নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম! কয়েকটা চ্যাপ্টারের পর বইটিতে বুদ হয়ে গিয়েছিলাম। বেশ সাবলীল অনুবাদ করেছেন তিনি। রেটিং ৫/৫। প্রচ্ছদটা খুব একটা ভাল হয়নি। মোটামুটি খারাপই হয়েছে। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯