ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মেছিলেন একটি অতি দরিদ্র এবং স্বল্পশিক্ষিত পরিবারে। তাঁর পিতা গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন একটি দোকানে। বেতন মাসে দু টাকা। তাই নিয়ে বাড়িতে তাঁর হৈচৈ এবং আনন্দ। তারপর তিনি তাঁর পুত্র ঈশ্বরকে কলকাতায় নিয়ে আসেন লেখাপড়া শেখাবেন বলে। ঈশ্বরচন্দ্র লেখাপড়া শুরু করেন সংস্কৃত কলেজে।
বহু বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম হয়েছিলো উনিশ শতকের বঙ্গদেশে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা অতুলনীয় অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু কালের ঢেউ এসে আগে হোক, পরে হোক, তাঁদের কীর্তিকে নির্মমভাবে মুছে ফেলেছে। নিদেনপক্ষে, ম্লান করে দিয়েছে। আজও যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের মধ্যে বিদ্যাসাগর একজন। কেবল বিদ্যার সাগর বলেই তাঁর খ্যাতি হয়নি, তিনি বিধবাবিবাহ প্রচলন, বহুবিবাহ রোধ এবং স্ত্রীশিক্ষা নিয়ে সমাজকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিলেন। উন্নত ধরনের পাঠ্যপুস্তক রচনা করে শিক্ষা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। কিন্তু তাঁর অসামান্য অবদান বাংলা গদ্যকে সব রকমের ভাব প্রকাশের উপযুক্ত করে নির্মাণ করায় এবং উন্নত মানের সাহিত্য রচনায়। জন্মের দু শো বছর পরে আজও তাই তিনি জীবিত আছেন।
গোলাম মুরশিদ
গােলাম মুরশিদ | গবেষক ও লেখক। ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানবীবিদ্যা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। বর্তমান গ্রন্থটি মানববিদ্যা সম্পর্কে তাঁর প্রথম রচনা। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি উপমহাদেশে মানবীবিদ্যা-বিষয়ক পথিকৃতের কাজ বলে বিবেচিত হয়েছিল। তারপর আরও প্রকাশিত হয়েছে রাসসুন্দরী থেকে রােকেয়া : নারীপ্রগতির একশাে বছর (১৯৯৪) এবং নারী ধর্মইত্যাদি (২০০৭)।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁর মাইকেল-জীবনী আশার ছলনে ভুলিতে তিনি কিংবদন্তির ধূম্রজাল থেকে মুক্তি দিয়ে। মাইকেলের জীবন বস্তুনিষ্ঠভাবে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি এমনই। একটি মননশীল এবং পথিকৃতের কাজ। পুরােনাে বাংলা গদ্যের ইতিহাস রচনায়ও - তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বিলেতে বাঙালিদের ইতিহাস নারী-প্রগতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার গবেষণা বাংলা সাহিত্যের জগৎকেই বস্তুত সমৃদ্ধ করেছে। বহু বছর অধ্যাপনা এবং বেতার সাংবাদিকতার কাজ করেছেন।