প্রকাশকের কথা পালরাজ তৃতীয় বিগ্রহপালের মৃত্যুকালে পালরাজ্য বৈদেশিক শত্রুর আক্রমণ ও অন্তর্বিপ্লবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তৃতীয় বিগ্রহপালের তিন পুত্র ছিল- দ্বিতীয় মহীপাল, দ্বিতীয় শূরপাল ও রামপাল। পিতার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মহীপাল সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু চারদিকে তখন বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্র চলচিল। পারিষদবর্গের উষ্কানিতে রাজা মহীপাল তাঁর দুই ভাই শূরপাল ও রামপালের উপর বিশ্বাস হারান এবং তাঁদেরকে কারারুদ্ধ করে রাখেন। মহীপাল প্রায় পাঁচ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর রাজত্বকালের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা উত্তর বাংলায় সামন্ত বিদ্রোহ। বরেন্দ্রের সামন্তবর্গ প্রকাশ্যভাবে বিদ্রোহী হয়ে রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বলা হয় কৈবর্ত নায়ক দিব্বোক বা দিব্য ছিলেন এই বিদ্রোহের নেতা। দিব্বোক মহীপালকে হত্যা করে বরেন্দ্রভূমি দখল করে নেন এবং নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তর বাংলায় দিব্বোক ও তাঁর বংশের শাসন বেশ কিছুকাল অব্যাহত ছিল। দিব্বোকের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই রুদোক এবং তারপরে রুদোকের পুত্র ভীম বরেন্দ্রভূমিতে রাজত্ব করেন। পরে অবশ্য রামপাল পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।
‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার’ বিজয়ী লেখক সত্যেন সেন বরেন্দ্রে সামন্ত বিদ্রোহ এবং পালরাজ মহীপালকে হত্যা করে বরেন্দ্র দখলের এই ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে ‘বিদ্রোহী কৈবর্ত’ উপন্যাস লিখেছেন। শ্রেণী সংগ্রামের নিরিখে ইতিহাসকে দেখে স্মরণাতীত যুগের প্রতিটি চরিত্রকে এমন আন্তরিকভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে করে কালের কুয়াশা ভেদ করে নির্যাতিত লাঞ্ছিত মানুষের সংগ্রামী রূপটি প্রতিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে প্রকাশ লাভ করেছে। পড়তে পড়তে মনে হয় একখানি প্রসন্ন সকাল যেন সুরভিত ফুলের মত ক্রমশঃ প্রস্ফুটিত হচ্ছে চোখের সামনে।
এই উপন্যাসখানি আমরা বাংলা ১৩৭৬ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিলাম। তখন এটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। দীর্ঘদিন অমুদ্রিত থাকায় কৈবর্ত শ্রেণীর অনেকেই তাদের অতীতের সেই গৌরবগাথা নিয়ে লেখা উপন্যাসখানি পুনঃপ্রকাশের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। বর্তমান সংস্করণ প্রকাশের পর তাদের সেই আশা পূরণ হল।