এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কোনও ইতিহাসগ্রন্থ নয়। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সিক্ত দুই কিশোরের প্রগাঢ় দেশপ্রেম এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। উপন্যাসের চরিত্রগুলো সচরাচর যেমন কাল্পনিক হয়- এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে পরা আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবগাঁথা দিনগুলোর ঘটনাবলী উপমার আকরে চিত্রিত হয়েছে এ উপন্যাসে। এসব ঘটনাবলী অভিজ্ঞজনদের কাছে অতি পরিচিত। পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর চব্বিশ বছরের শোষণের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে যে পটভূমিতে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই সময়ের প্রত্যাশা আর স্বাধীনতাত্তোর তিন যুগের ব্যাপ্ত সময়ে যে প্রাপ্তি তাতে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দুই কিশোরের একজন রমিজ। মুক্তিযুদ্ধে তার অসাধারণ বীরোচিত ভূমিকার জন্য যুদ্ধকালীন সময়েই সে হয়ে উঠেছিল জীবন্ত কিংবদন্তী। মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্ন নিয়েই সে এখনও নিরন্তর যুদ্ধ করে চলেছে নিরস্ত্র অবস্থায়। তার এই যুদ্ধের সহযোদ্ধা হিসেবে সে অগণন আলোকিত মানুষ চায়। অপর কিশোর করিম স্বাধীনতা যুদ্ধে রমিজের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। হয়ে উঠেছিল সহযোদ্ধা। দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে রণাঙ্গনে। ওদের বন্ধুত্ব সময়ের সুদীর্ঘ পরিসরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ওদের শাণিত চেতনায় প্রশ্নবিদ্ধ বর্তমান প্রজন্ম। ওদের মনের নিভৃত কোণে সংশয় একাত্তরের সেই দেশপ্রেম এখন আদৌ আর আছে কি না। দেশপ্রেমের এই অভাবই এ দেশের সকল অমঙ্গলের প্রভাবক কি না। অকৃতদার রমিজ নিরলস স্বপ্ন বুনে যায় তার সবটুকু বিশ্বাস ও প্রাণশক্তি দিয়ে। করিম ছকে বাঁধা জীবনের নিগঢ়ে হাঁফিয়ে ওঠে, খুঁজে নেয় একটা অখণ্ড সময়- একাকী নিরিবিলি কাটানোর জন্য। অখণ্ড সময় খণ্ডিত হয়। মনের পর্দায় তাকে তাড়া করে ফেরে রমিজ, রমিজের স্বপ্ন।