বেতাল পঞ্চবিংশতি পঁচিশটি উপাখ্যান নিয়ে রচিত। উজ্জয়িনী নগরের রাজা বিক্রমাদিত্য সংসারবিবাগী হয়ে বনবাসে চলে গেলে দেবরাজ ইন্দ্র নগর রক্ষার্থে যক্ষকে নিয়োগ দেন নগর প্রহরার কাজে। অনেক বৎসর পর ফিরে এলে যক্ষ তাঁকে সাবধান করে দেন এক যোগী হতে। যে কিনা কৌশলে রাজা বিক্রমাদিত্যকে বলি দেবার ফন্দি আঁটছে। কালক্রমে একদিন দেখা হয় সেই যোগীর সাথে। ইতিপূর্বে সেই যোগী হত্যা করে চন্দ্রসুর নামে এক রাজাকে। তারপর তার শবদেহ ঝুলিয়ে রাখে শ্মশানের এক গাছে। রাজা বিক্রমাদিত্যকে যোগী আদেশ করে সেই শবদেহকে তার কাছে সমর্পণ করতে। রাজা যোগীর কথামত শ্মশানে গিয়ে সেই শবদেহ কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসে। সেই শবদেহই বেতাল। বেতাল রাজাকে ২৫টি উপাখ্যান শোনায়। প্রতিটি উপাখ্যান শেষে রাজাকে সে প্রশ্ন করে। সঠিক উত্তর দিলে বেতাল আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে যায়। রাজা আবার তাঁকে নিয়ে আসে, আবার সে চলে যায়। শেষ উপাখ্যানের উত্তর দেবার পর বেতাল রাজাকে নিষ্ঠুর যোগীর হাত থেকে মুক্তি লাভের উপায় বলে দেয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
সমাজ সংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, দয়াদাক্ষিণ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-৯১) অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা মনে রেখেও রবীন্দ্রনাথ বলেছিঠেন, ‘তাঁহার প্রধান কীর্তি ভঙ্গভাষা’। তিনিই বিদ্যাসাগরকে ‘বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী’ বলে অভিহিত করে বাংলা গধ্যে তাঁর দানের বিস্তার পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। মূল হিন্দি অবলম্বনে বেতালপঞ্চবিংশতি (১৮৪৭) লিখে বাংলাসাহিত্যে বিদ্যভসাগরের যাত্রা শুরু। এরপর তাঁর অনুবাদমূলক সাহিত্যকর্ম শকুন্তলা (১৮৫৪) কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটক এর অবলম্বন। তবে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত নাটককে বাংলায় আখ্যানের রূপ দিয়েছেন মূলে সাতটি অঙ্ক অনুবাদে সাতটি পরিচ্ছেদের রূপ নিয়েছে। মূলে যা ক্রিয়ামূলক, অনুবাদে তা বিবৃতিমূলক, সংলাপ উভয়ই আছে। তবে তার চেয়েও বড়ো পরিবর্তন করেছেন রুচি ও বাস্তবতার বিবেচনায়। কালিদাসের কালে রাজসভায় যে-আদিরসের জোগন সংগত এমনকী আবশ্যিক মনে হতো, উনিশ শতকের পাঠকসাধারণের জন্যে বিদ্যাসাগর তা রুচিকর বিবেচনা করেন নি। ফলে, মূলে যা প্রকট, তা কখনো আভাসে প্রকাশিত, কখনো বর্জিত। এইজন্যে সমালোচকেরা বলেন, কালিদাসের দুষ্মন্ত যেখানে কামুক, বিদ্যাসাগরের দুষ্মন্ত সেখানে প্রেমিক। সংসারানভিজ্ঞা শকুন্তলার ব্রীড়াবনত ভাবটাও বাংলায় চমৎকার ফুঠে উঠেছে।