বাংলাদেশের লোককাহিনী বইটি লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান বাংলাদেশের লোককাহিনী
বাংলাদেশের লােককাহিনী’ প্রথম খণ্ড বইটির প্রথম সংস্করণ যারা পাঠ করেছেন তাদের উৎসাহ ও আগ্রহেই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হল। বইটি সব বয়সের পাঠককেই সমান আনন্দ দেয় বলে পাঠকদের অভিমত। বিশেষ করে শিশু কিশােররা প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে এটি পাঠ করে। কেউ কেউ পাঠ্যবই রেখে বারবার এটি পড়তে চায় এমন অভিযোেগও অনেক শুনেছি। যাহােক, বাংলাদেশ লােককাহিনী (প্রথম খণ্ড) প্রথম প্রকাশের অল্পদিনের মধ্যে সব কপি শেষ হয়ে যায়। অনেকে আমার কাছে বইটি চেয়েছেন, কিন্তু আমি দিতে পারিনি। বইটির কাহিনীগুলাে সংগ্রহ করতে যে অমানুষিক পরিশ্রম হয়েছিল পাঠকের ভালােলাগার কথা শুনে তা ভুলে যাই। সান্ত্বনা এই যে, এসব লােককাহিনী হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আজকাল হাজার চেষ্টা করলেও এসব লােকজ সম্পদ উদ্ধার করা আর সম্ভব নয়। আমার শ্রদ্ধেয় পিতা প্রয়াত মােহাম্মদ হানীফ পাঠান বরাবরই এসব কিচ্ছা-কাহিনীগুলাে সংগ্রহ করে রাখার তাগিদ দিতেন। আকাশ সংস্কৃতির ভিড়ে লােকজ কিচ্ছা-কাহিনী আজ প্রায় বিলুপ্ত। যাদের কাছে এসব কাহিনী সংগৃহীত—তাদের অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি লােকসাহিত্য নিয়েও কাজ করি দিনরাত। মূল্যবান এ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ অমর ২১শে বই মেলায় পাঠকের হাতে যাচ্ছে—এই ভেবে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। লােকসাহিত্য ও কাহিনী সংগ্রহে আমাকে আন্তরিক উৎসাহ দিয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে ড, আশরাফ সিদ্দিকী, শামসুজ্জামান খান, প্রয়াত ড; মাজহারুল ইসলাম, মরমী কবি সাবির আহমেদ চৌধুরী, আমার পিতা প্রয়াত মােহাম্মদ হানীফ পাঠান, ড. মনিরুজ্জামান, প্রয়াত সাংবাদিক-সম্পাদক বজলুর রহমান, ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ, কথাশিল্পী মিন্নত আলী, অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন প্রমুখ অন্যতম। | দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান বহু গ্রন্থপ্রণেতা আমার পরম সুহৃদ মােহাম্মদ সা'দাত আলী, ছােট ভাই মােঃ বরকত উল্লাহ পাঠান (প্রভাষক, হাজী আসমত কলেজ, ভৈরব), এবং অনিন্দ্য প্রকাশের কর্ণধার স্নেভাজন আফজাল হােসেন-এর আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব লােককাহিনী পাঠে চিরায়ত বাংলার লােকসাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট হবে এ উদাত্ত আহবান জানিয়ে ইতি টানছি।
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান
জন্ম: ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বটেশ্বর গ্রাম। পিতা: মােহাম্মদ হানীফ পাঠান। মাতা: মেহেরুন্নেছা । স্ত্রী: সেলিনা বেগম। তিন কন্যা: ... পিতা মােহাম্মদ হানীফ পাঠান ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত লােকসাহিত্য সংগ্রাহক, গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রাহক, শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ, ভাষাসৈনিক, বৃটিশ ও জমিদার বিরােধী আন্দোলনকারী, সুবক্তা ও একজন সফল কৃষক। পিতার প্রায় সব গুণই সুযােগ্য পুত্র হাবিবুল্লা পাঠান এর মধ্যেও বিরাজমান। বিশেষত লােকসাহিত্য ও প্রত্নতত্ত্বে পিতাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছেন পুত্র। তার অক্লান্ত ও বিরামহীন প্রচেষ্টায়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে ওয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম দুটি আজ সারা বাংলাদেশে, এমনকি সারা বিশ্বে পরিচিত। ওয়ারী-বটেশ্বর আজ ইতিহাসেরই অংশ। এখানে পাওয়া গেছে সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন...বসতি পাওয়া গেছে মূল্যবান নকশি পাথরের গুটিকা। এসবই তাঁর গবেষণালব্ধ কর্ম। সম্পূর্ণ নিজ খরচে বটেশ্বর গ্রামে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছে, বটেশ্বর জাদুঘর’ বা প্রত্বসংগ্রহশালা। লােক সাহিত্যের নানা উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহে হাবিবুল্লাহ পাঠানের রয়েছে অসাধারণ সাফল্য। একটি বইয়ের তথ্য ও উপাদান সংগ্রহ করেছেন একটানা ৩৫ বছর। বেরিয়েছে ৩টি খণ্ডে লােককাহিনী। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন আকাশবাণীসহ বাংলাদেশের সব সরকারী-বেসরকারী বেতারটেলিভিশন ও সংবাদপত্রে তাঁর জীবন ও কর্মবিষয়ক বহু সাক্ষাৎকার ও ফিচার প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। হাবিবুল্লা পাঠানের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: নরসিংদীর কবি সাহিত্যিক (১৯৮৬), নরসিংদীর লৌকিক খেলাধুলা (১৯৮৮) বাংলা একাডেমী প্রকাশিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ওয়ারী বটেশ্বর (১৯৮৯), বাংলাদেশের লােককাহিনী (১ম খণ্ড নরসিংদী- ১৯৯৬) , বাংলাদেশের লােককাহিনী (২য় খও নেত্রকোনা- ১৯৯৭), বাংলাদেশের লােককাহিনী (৩য় খণ্ড বি. বাড়িয়া- ১৯৯৮), নরসিংদী গাজীপুরের লােকঐতিহ্য : বিবাহ ও মেয়েলী ছড়াগীত (২০০০)