ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়া ধারণ করে আছে বহু বৈচিত্র্য ও বর্ণিলতা। সমতল-পাহাড়-সমুদ্র-অরণ্য এবং ভিন্ন স্বভাবী ছয়টি ঋতু যেমন এই বৈচিত্র্যের স্মারক, তেমনি এদেশের অধিবাসীদের ভেতরও সেই বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য দৃশ্যমান। বাঙালি ছাড়াও এদেশে বহু আদিবাসী জাতিসত্তা তাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির রঙে রাঙিয়ে তুলেছে এখানকার সাংস্কৃতিক ভূগোল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও আধিপত্যবাদী মনোভঙ্গি এই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক বিকাশের স্বাভাবিক গতিকে বিনষ্ট করেছে, করছে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি কখনো আগ্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে, কখনো উপেক্ষা ও বর্জনের ভেতর দিয়ে এসব জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে আদিবাসীদের।
আদিবাসী জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই দুর্লক্ষণ সুস্পষ্ট। পৃষ্ঠপোষকতা, সংগ্রহ ও মূল্যায়নের অভাবে তাই হারিয়ে যেতে বসেছে বহু জাতিসত্তার মৌখিক ও লিখিত সাহিত্য। এ ক্ষতি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যম-িত সাহিত্যধারারই ক্ষতি।
এমন ক্রান্তিকালে ড. হিমেল বরকত সম্পাদিত বাংলাদেশের আদিবাসী কাব্যসংগ্রহ সংকলনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। এ সংকলনে সন্নিবেশিত হয়েছে ২৩টি আদিবাসী জাতিসত্তার প্রায় তিনশ জন কবির কবিতা, ছড়া ও গান। আদিবাসীদের কবিতা নিয়ে বাংলাদেশে এটিই সর্ববৃহৎ সংকলন। নিশ্চিতভাবে এ সংকলন আদিবাসী কাব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে বাংলাদেশের পাঠক, গবেষক ও কাব্যভোক্তাদের।