বাংলা প্রবাদে লোককাহিনী বইটি লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান। বাংলাদেশ লােকসাহিত্যের এক স্বর্ণপ্রসূ ভাণ্ডার। সেই ভাণ্ডারের বহুবিধ রত্নসভারের মধ্যে প্রবাদ বিশিষ্টতম। কোনাে জাতি বা সমাজের ইতিহাসঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি, প্রথা-পদ্ধতি, পারিবারিক রীতিনীতি, বিশ্বাস ও সংস্কার, কৃষি, ভূমি ব্যবস্থা, জলবায়ু, মানবিক আচার-আচরণ, দোষ-গুণ, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতির ঋদ্ধপ্রকাশ প্রবাদে বিধৃত। প্রবাদ-প্রবচনের বিশাল ভাণ্ডার বাংলাসাহিত্যের বিরাট অংশজুড়ে আছে। আবহমান বাংলার এসব প্রবাদ একদিনে তৈরি হয়নি। নানা উপলক্ষে, নানা প্রেক্ষাপটে, নানা ঘটনায় এসব প্রবাদ-প্রবচন তৈরি হয়ে লােকমুখে চলে আসছে বছর বছর ধরে। বাংলা প্রবাদে লােককাহিনী বইটিতে এসব মজাদার প্রবাদ সৃষ্টির পেছনের ঘটনা বা উপলক্ষ বা প্রবাদ সৃষ্টি হওয়ার পেছনের গল্প অত্যন্ত আনন্দময় করে তুলে ধরা হয়েছে। এসব প্রবাদের গল্প পড়ে সবধরনের পাঠক। নির্মল আনন্দ পাবেন। দীর্ঘসময় প্রবাদ-প্রবচন সংগ্রহ ও গবেষণা করে। লােকসাহিত্যে অত্যন্ত সুপরিচিত-হাবিবুল্লা পাঠান এ বইটিতে বেশকিছু প্রবাদের গল্প নিপুণ হাতে লিখেছেন। তাঁর প্রতিটি বই সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গবেষক পর্যন্ত সবাইকে যেমন আনন্দ দেয় তেমনি এগুলাে হারিয়ে যাবার হাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছে । আবহমান বাংলার হাজার বছর ধরে লােকমুখে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচন তৈরি হওয়ার পেছনের এসব মজাদার।
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান
জন্ম: ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বটেশ্বর গ্রাম। পিতা: মােহাম্মদ হানীফ পাঠান। মাতা: মেহেরুন্নেছা । স্ত্রী: সেলিনা বেগম। তিন কন্যা: ... পিতা মােহাম্মদ হানীফ পাঠান ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত লােকসাহিত্য সংগ্রাহক, গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রাহক, শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ, ভাষাসৈনিক, বৃটিশ ও জমিদার বিরােধী আন্দোলনকারী, সুবক্তা ও একজন সফল কৃষক। পিতার প্রায় সব গুণই সুযােগ্য পুত্র হাবিবুল্লা পাঠান এর মধ্যেও বিরাজমান। বিশেষত লােকসাহিত্য ও প্রত্নতত্ত্বে পিতাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছেন পুত্র। তার অক্লান্ত ও বিরামহীন প্রচেষ্টায়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে ওয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম দুটি আজ সারা বাংলাদেশে, এমনকি সারা বিশ্বে পরিচিত। ওয়ারী-বটেশ্বর আজ ইতিহাসেরই অংশ। এখানে পাওয়া গেছে সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন...বসতি পাওয়া গেছে মূল্যবান নকশি পাথরের গুটিকা। এসবই তাঁর গবেষণালব্ধ কর্ম। সম্পূর্ণ নিজ খরচে বটেশ্বর গ্রামে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছে, বটেশ্বর জাদুঘর’ বা প্রত্বসংগ্রহশালা। লােক সাহিত্যের নানা উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহে হাবিবুল্লাহ পাঠানের রয়েছে অসাধারণ সাফল্য। একটি বইয়ের তথ্য ও উপাদান সংগ্রহ করেছেন একটানা ৩৫ বছর। বেরিয়েছে ৩টি খণ্ডে লােককাহিনী। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন আকাশবাণীসহ বাংলাদেশের সব সরকারী-বেসরকারী বেতারটেলিভিশন ও সংবাদপত্রে তাঁর জীবন ও কর্মবিষয়ক বহু সাক্ষাৎকার ও ফিচার প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। হাবিবুল্লা পাঠানের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: নরসিংদীর কবি সাহিত্যিক (১৯৮৬), নরসিংদীর লৌকিক খেলাধুলা (১৯৮৮) বাংলা একাডেমী প্রকাশিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ওয়ারী বটেশ্বর (১৯৮৯), বাংলাদেশের লােককাহিনী (১ম খণ্ড নরসিংদী- ১৯৯৬) , বাংলাদেশের লােককাহিনী (২য় খও নেত্রকোনা- ১৯৯৭), বাংলাদেশের লােককাহিনী (৩য় খণ্ড বি. বাড়িয়া- ১৯৯৮), নরসিংদী গাজীপুরের লােকঐতিহ্য : বিবাহ ও মেয়েলী ছড়াগীত (২০০০)