বাঙালি সংস্কৃতির রূপ ভিত্তি বঙ্গীয় সংস্কৃতি যেহেতু বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষীদের সংস্কৃতি, সে কারণে ‘বাঙ্গালা’ নামে একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গড়ে ওঠার আগে অথবা বাংলা ভাষা পুরোপুরি বঙ্গীয় বৈশিষ্ট্য লাভ করার আগেকার আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে অন্তত তত্ত্বগতভাবে আখ্যায়িত করা যায় না। আবার এও স্বীকার্য যে, সুলতানি আমলের বাঙ্গালা রাজ্য অথবা বাংলা ভাষা গড়ে ওঠার মুহূর্ত থেকে বাঙালি সংস্কৃতির জন্ম হয়নি। বঙ্গীয় সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে উঠেছিলো আরো অনেক আগে থেকে। বাঙ্গালা নামে পরিচিত এই বিরাট এলাকায় ছিলো অনেকগুলি রাজ্য-গৌড়, রাঢ়, দক্ষিণ রাঢ়, সুহ্ম, বরেন্দ্রী, হরিকেল, সমতট এবং বঙ্গ। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে আরও ছোটোখাটো রাজ্য ছিল। ১৩৫০-এর দশকে গৌড়ের সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁ জয় করে ‘শাহ-ই বাঙালিয়ান’ অর্থাৎ বাঙালিদের শাহ উপাধি গ্রহণ করেন। বৃহত্তর ‘বাঙ্গালা’র জন্ম তার আগে হয়নি। অন্য দিকে, বাংলা ভাষাও আবার মোটামুটি ওই সময়েই নিজের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে স্বতন্ত্র ভাষার রূপ লাভ করে। দুদিক থেকেই বিবেচনা করলে বঙ্গীয় সংস্কৃতির বয়স তাই আট শো অথবা বড় জোর এক হাজার বছর। এর চেয়ে একে পুরানো বলে গণ্য করা যায় না। কিন্তু এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল এই অঞ্চলের হাজার হাজার বছরের পুরানো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে। একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাঙালিদের নাম ‘ভেতো’ বাঙালি। আর্য অথবা মুসলমানরা এ দেশে ধান আনেননি, ধানের চাষ এ অঞ্চলে আরম্ভ হয়েছিল অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগে। পরে কখনো আর্য, কখনো সেন, কখনো তুর্কি, কখনো আফগান, কখনো মোগল এবং সবশেষে ইংরেজরা বঙ্গভূমি দখল করেছেন, তবু বাঙালিদের ভাত খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন হয়নি। ভাত বাঙ্গালীর একটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি।