একবিংশ শতাব্দীর তরুণদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পঠিত কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’।
মানব-মানবীর প্রেমনির্ভর এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রাখে পাঠককে, পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যসম্ভারের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত এবং সমালোচিত কবিতা ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২)। এই কবিতাটির নামেই কাব্যগ্রন্থটির নামকরণ করা হয়।
কবি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের পট-পরিক্রমায় বিচরণ করে জীবনের সন্ধান করেছেন। ভাষার সূ্ক্ষ গাঁথুনি এঁটে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের দ্বারে কড়া নেড়ে সমকালীন বাংলার অবস্থাকে ইঙ্গিত করেছেন।
‘ঐতিহ্য উত্তরাধিকার’-সচেতন কবি ঐতিহ্যকে আশ্রয় করেই সৌন্দর্যকে রূপায়িত করেছেন ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থে। কবি শিল্পসম্মত বর্ণনায় বনলতা সেনের মোহনীয় চুলের অন্ধকার সকলের হৃদয়-হরণ করে, দিশেহারা করে ফেলে অনুসন্ধানী মনকেও।
বনলতা সেনের মুখকে ‘শ্রাবস্তীর’ সঙ্গে তুলনা করে রহস্যময় শিল্পকলায় পরিণত করা হয়েছে।
প্রকৃতির অতি স্বাভাবিক নিয়মেই দিনের শেষে সন্ধ্যার আগমন ঘটে। এই কাব্যগ্রন্থে সন্ধ্যার আগমন শিশিরের শব্দের মতো। শীতের রুক্ষতার মাঝে সৌন্দর্যের এক বিন্দু প্রকাশ ঘটে সকালের শিশিরে। সূর্যের প্রখরতায় সেই সৌন্দর্যটুকুও প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যায়। আবার দিনের সৌন্দর্যকে ম্লান করে নিঃশব্দে সন্ধ্যা সমস্ত প্রকৃতিতে অন্ধকার নিয়ে হাজির হয়। সন্ধ্যা নিঃশব্দে প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্যকে ম্লান করে হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তোলে।
জীবনানন্দ দাশ
জন্ম : বরিশাল, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯। আদি নিবাস গাওপাড়া, গ্রাম- বিক্রমপুর। পিতা বরিশাল ব্রজমােহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশ। বরিশাল ব্রজমােহন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক (১৯১৫), বরিশাল ব্রজমােহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ (১৯১৭) সালে । কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ (১৯২১) ডিগ্রী লাভ। ১৯২২-১৯২৮-এর কলকাতা সিটি কলেজে, ১৯২৯-এ বাগেরহাট কলেজে ও ১৯২৯-১৯৩০-এ দিল্লীর রামযশ কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৩০-এ ঢাকার লাবণ্য গুপ্তের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। কিছুকাল বেকার জীবন যাপন ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কিছুদিন কর্ম সম্পাদন। কিছুকাল ব্যবসা করার পর ১৯৩৫-এ বরিশাল ব্রজমােহন কলেজে অধ্যাপনার চাকরি লাভ। ১৯৪৬ পর্যন্ত এ কলেজে অধ্যাপনা। অতঃপর কলকাতা গমন। ১৯৪৭-এ ‘দৈনিক স্বরাজ’-এর সাহিত্য বিভাগ সম্পাদনা। ১৯৫১-১৯৫২- তে খড়গপুর কলেজে, ১৯৫২ তে বড়িষা কলেজে ও ১৯৫৩ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হাওড়া গার্লস কলেজে অধ্যাপনা।
প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থ : 'ঝরা পালক' (১৯২৮), ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন' (১৯৪২), সাতটি তারার তিমির' (১৯৪৮), রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭) তিনি একজন কথাসাহিত্যিকও। মৃত্যুর পর প্রকাশিত উপন্যাস : মাল্যবান (১৯৭৩), সতীর্থ (১৯৭৪)। গল্প সংকলন : ‘জীবনানন্দ দাশের গল্প’ (১৯৭৯)। জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত রচনাবলী খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। মৃত্যু : কলকাতা, ট্রাম দুর্ঘটনা, ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪।