বাহাদুর শাহ জাফর ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্র। শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের জীবন ছিল আড়ম্বরপূর্ণ অথচ বড়ই ট্র্যাজিক। মুঘল বংশের শেষ সম্রাট হয়েও তাঁর জীবন ছিল লালকেল্লার চৌহদ্দির ভেতর একরকম বন্দী। সারা জীবন ছিলেন ইংরেজদের কৃপা ও রোষানলের শিকার। ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবে জড়িত থাকার ফলে তিনি ট্র্যাজিক হিরোতে পরিণত হন। ৮২ বছর বয়সে বিদ্রোহী সিপাহীদের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাহাদুর শাহ জাফর, যার চেতনা পরবর্তী পর্যায়ে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছে। লালকেল্লার হালচাল, সিপাহী বিপ্লবের ব্যর্থতা, বাদশাহের লালকেল্লায় প্রহসনের বিচার, রেঙ্গুনে নির্বাসন, রেঙ্গুনে বাহাদুর শাহ জাফরের করুণাভরা গ্লানিকর শেষ দিনগুলো ও তাঁর বংশধরদের অভাব অনটনসহ অনেক অজানা কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন জাফর আলম তাঁর রচিত এই গ্রন্থে। ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠককে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে বাহাদুর শাহের ভূমিকা এবং তাঁর সম্পর্কে জানতে গ্রন্থটি সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে।
জাফর আলম
জাফর আলমের জন্ম 1943 সালে পর্যটন শহর কক্সবাজারে। স্কুল জীবন থেকে তার লেখালেখি ও সাংবাদিকতা শুরু। পঞ্চাশের দশকে তিনি সাপ্তাহিক পল্লীবার্তা (পরবর্তীকালে পূর্বদেশ), দৈনিক সংবাদ এবং তৎকালীন পাকিস্তান অবজার্ভার (বর্তমানে বাংলাদেশ অবজার্ভার)- এর বগুড়া জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। 1964 সালে তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের (অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা) সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে দৈনিক জনপদে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। 1975 সালে সরকারী নির্দেশে দৈনিক জনপদ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবলুপ্ত সংবাদপত্রের উদ্বৃত্ত সাংবাদিক হিসেবে তথ্য অধিদপ্তরে তথ্য অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সাফল্যের সাথে কাজ করেন। তিনি কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে কাউন্সিলার (প্রেস) হিসেবে কাজ করেন। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য অফিসার (প্রেস) হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মুন্সী প্রেমচন্দ্রের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে 1981 সালে (29 জুলাই থেকে 31 পর্যন্ত) বানারসীতে ভারতীয় সাহিত্য একাডেমী এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে জাফর আলম বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন এবং প্রেমচন্দ্রের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পাঠ করেন। অনুবাদক হিসেবে জাফর আলম সুপরিচিত। ইতোমধ্যে তাঁর 18 টি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কলকাতার সাহিত্য মাসিক প্রমার পক্ষ থেকে জনাব জাফর আলমকে 1997 সালের মার্চ মাসে প্রমা সাহিত্য পদক প্রদান করা হয়।