হযরত খান জাহান-সুলতানী বাংলার এক সুমহান কীর্তিমান সাধক-পুরুষ, দীর্ঘ কর্মক্লান্তি শেষে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন বাগেরহাটের পুণ্য মৃত্তিকাতলে। খানেল আজম উলুঘ খান জাহান প্রায় সাড়ে পাঁচশতাধিক বছর আগে ইলিয়াসশাহী ও পরবর্তী ইলিয়াসশাহী (মাহমুদশাহী) সালতানাতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে সুফী-দরবেশ, সংস্কারক, ধর্মনেতা স্থাপত্যপ্রেমিক, প্রজাহিতৈষী এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্মবীর। জাতীয় অস্তিত্বের সংকটকালে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন ত্রানকর্তারূপে। গৌড় থেকে সোনারগাঁ, সেখান থেকে খলিফাতাবাদ-এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যেমন ছিল তাঁর নির্মিতির ধারা, তেমনি ইলিয়াসশাহী সালতানাতের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি হয়েছেন রাজস্ব সচিবত, সেনাধ্যক্ষ ও প্রধান উজির। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বহুমাত্রিক কর্মের মহিমায় সমুজ্জ্বল এই বিশাল কীর্তিমানের অপরিমেয় কর্মময়তার যথার্থ মূল্যায়নের বদলে অনেক ক্ষেত্রেই চিত্রিত করা হয়েছে অলীক গল্পগাথার আস্তরণে ঢাকা নিরেট ধর্মাচারী দরবেশরূপে। অথচ তাঁর পূর্বপ্রেক্ষিতের নিরিখে, তাঁর সমকাল এবং উত্তরকালে তাঁর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মূল্যায়নের যৌক্তিকতার দাবী বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই সাথে তাঁর উত্তরধারার ভূমিকা মূল্যায়নও অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠায় লেখক সেখানেও আলো ফেলতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।