অতীশ দীপঙ্করের (৯৮২—১০৫৪ খ্ির.) জন্ম বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে। তিনি বৌদ্ধ মাধ্যমিক ধারার দার্শনিক। নাগাজুর্ন-পরবর্তী মাধ্যমিক দর্শনের সারাংশ ধারণ করে আছে তাঁর রচনাবলি। মহাযান বৌদ্ধমতের দার্শনিক বিতর্কগুলো আশ্রয় করে অতীশ গড়ে তুলেছেন এক স্বচ্ছ জীবনদৃষ্টি। চর্যাপদ, দোহাকোষসহ অন্যান্য বৌদ্ধ রচনার ওপর নতুন করে আলো ফেলতে সাহায্য করবে তাঁর এই রচনাবলি। বাংলাদেশ, ভারত ও তিব্বতের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা এবং রচনাগুলো। পালবংশীয় রাজা নয়পাল ছিলেন তাঁর শিষ্য। তিব্বতীয় রাজার আমন্ত্রণে তিনি তিব্বতে গেছেন এবং সেখানে বৌদ্ধধর্ম সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম ও সাহিত্যে অতীশ দীপঙ্কর রচনাবলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
অতীশ দীপঙ্কর
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলেন একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত যিনি পাল সাম্রাজ্যের আমলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্মপ্রচারক ছিলেন।
দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। তিব্বতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনী, স্তোত্রনামাসহ তাঞ্জুর নামে বিশাল এক শাস্ত্রগ্রন্থ সংকলন করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতীরা তাকে অতীশ উপাধীতে ভূষিত করে। অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত এবং পালি বই তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন। দীপঙ্করের রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বোধিপথপ্রদীপ চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্বমণ্যাবলি, বোধিসত্ত্বকর্মাদিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযানপথসাধনবর্ণসংগ্রহ, শুভার্থসমুচ্চয়োপদেশ, দশকুশলকর্মোপদেশ, কর্মবিভঙ্গ, সমাধিসম্ভবপরিবর্ত, লোকোত্তরসপ্তকবিধি, গুহ্যক্রিয়াকর্ম, চিত্তোৎপাদসম্বরবিধিকর্ম, শিক্ষাসমুচ্চয় অভিসময় ও বিমলরত্নলেখনা উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং ইতালির বিখ্যাত গবেষক গ্যুসেপ তুচ্চি দীপঙ্করের অনেকগুলো বই আবিষ্কার করেন।