ছােটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধ আমাকে তাড়িত করেছে। আমি যে মাটির সন্তান, সেই গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার অনেকেই সেই সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদের কেউ কেউ আমাকে বলেছেন সেইসব অগ্নিঝরা দিন রাতের কথা। আর আমিও গভীর আগ্রহে তা শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই অজানা এবং না-বলা গল্পই আমি তুলে ধরেছি এই গ্রন্থে। স্বীকার করছি, এই গল্পে সত্য ঘটনার পাশাপাশি কল্পনারও মিশেল ঘটেছে। কিছু স্থানের ক্ষেত্রেও আমি কল্পনার আশ্রয় নিয়েছি। তবে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অমর্যাদা করি নি, মুক্তিযােদ্ধাদের অসম্মান করি নি। তারপরেও যদি কারও কাছে মনে হয় যে এখানে অসম্পূর্ণতা, অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা, অতিরঞ্জিত বা অযৌক্তিক কিছু রয়েছে তাহলে কিছু বলার নেই আমার। এক্ষেত্রে বিষয়টি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন বলে আশা করছি। আর একটি কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন—তাঁদের সবার কাছে আমি ঋণী। এই ঋণ অপরিশােধ্য।
এই গ্রন্থে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছেন একজন বৃদ্ধ, যিনি মুক্তিযােদ্ধা, আর সেই গল্প শুনছে তার নাতি এক কিশাের। দাদুর এইসব গল্প বলার উদ্দেশ্য হলাে, উত্তর প্রজন্মের কাছে যুদ্ধস্মৃতি রেখে যাওয়া। আর কিশাের নাতিরও কৌতূহল রয়েছে এই বিষয়ের প্রতি। সে গভীর আগ্রহে মৃক্তিযুদ্ধের নানা গল্প শােনে, নানা প্রশ্ন করে, বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে চায়। দাদুও গভীর আনন্দে তাঁর নাতির নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। কেননা এই প্রজন্মের অনেকেই যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি উদাসীন, সেখানে তার নাতি ব্যতিক্রম। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি ওর প্রবল আকর্ষণ রয়েছে, রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলাে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানলেই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পুরােপুরি ধারণা পাওয়া যাবে না। এর সঙ্গে মুক্তিযোেদ্ধাদের গেরিলা হামলা ও সম্মুখ সমরের হৃদয়স্পর্শী ঘটনা সম্পর্কেও জানতে হবে। আর সেটি যদি কোনাে মুক্তিযােদ্ধার মুখ থেকে জানা যায়, তাহলে তাে সােনায় সােহাগা।
আলেক রোজারিও
আলেক রােজারিও’র জন্ম ১২ মার্চ, ১৯৬২, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার চড়াখােলা গ্রামে। বাবা এভারিশ মাইকেল রােজারিও। মা স্বর্গীয়া মাটিনা রােজারিও। ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর।
প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ ‘আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ (২০১৫)। তাঁর লেখা অন্য দুটি গ্রন্থ হচ্ছে ‘যুদ্ধ জয়ের গল্প’ ও ‘মা’ (২০১৭)। এটি তার চতুর্থ গ্রন্থ। উল্লেখ্য, বর্তমান গ্রন্থের মতাে আগের তিনটি গ্রন্থেও এদেশের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ মূর্ত হয়ে উঠেছে স্বাধীনতার জন্য এই বাংলার দামাল ছেলেমেয়েদের আত্মত্যাগের মর্মস্পর্শী কাহিনি উঠে এসেছে।
২০০০ সালে তিনি সপরিবারে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এখন তিনি বসবাস করছেন প্যারিসে, সেখানকার স্থায়ী নাগরিক হিসেবে। স্ত্রী রীটা নিয়তী রােজারিও এবং তিন সন্তান জেউস জাষ্ট রােজারিও, ট্রিজা বরুণা রােজারিও ও মাটিনা বনলতা রােজারিওকে নিয়ে তাঁর আপন ভুবন। সেই ভুবনে পুত্রবধূ ইম্মাকুলেট তীনা রােজারিও'র উপস্থিতি তাঁকে আপ্লুত করে।
একদা এদেশের নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জীবন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি হলাে: জীবন .. মানেই উন্নতি আর উন্নতি মানে প্রজন্ম গড়া। অন্যদিকে প্রজন্ম গড়ার অর্থই হলাে দেশ উন্নতির শিখরে ওঠা।