আরজ আলী মাতুব্বর একজন "স্বশিক্ষিত দার্শনিক"।ওইপাড়ার বোদ্ধাজনরা তাকে এই উপাধি দিয়েছেন। কিন্তু দর্শনের চরিত্র এটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দর্শন বিচার বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যায়। তার সমুখে উদ্ভাসিত প্রশ্নাবলীর উত্তর খুঁজে বেড়ায়। সে প্রশ্ন করে থেমে থাকে না। আবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও দিয়ে দেয় না। বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের তফাৎ এখানেই। বিজ্ঞান একসময় সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়৷ আরজ আলী মাতুব্বর দর্শনের পথে হেঁটে প্রশ্ন করতে পেরেছেন। এটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু উত্তর খুঁজতে সচেষ্ট হননি। যা একজন দার্শনিকের গুণ নয়। তাই বলছিলাম দর্শনের চরিত্র তাঁর দার্শনিক সত্তাকে অনিবার্যভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
২
মাতুব্বর সাহেবের রচনাসমগ্রকে তিনখণ্ডে মলাটবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডে রয়েছে ৮ টি বই। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ৬ টি, আর তৃতীয় খণ্ডে রয়েছে ৪ টি। তন্মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয় খণ্ডে এরকম তেমন কিছু নেই। সেখানে মূলত তাঁর "জীবন বাণী" ও "অধ্যয়ন সার" ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবুও যে দু'একটি প্রসঙ্গ আলোচনার দাবি রাখে, সেগুলো প্রথম দু'খণ্ডে এসে যাওয়ায় সেখানে নতুন করে কিছু বলার থাকেনি।
৩
রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ডে প্রথম বই হচ্ছে "সত্যের সন্ধান" যেটি মূলত তাঁর জীবনের প্রধানতম বই। এ বইয়ের মূল্যায়নে আরজ আলী মাতুব্বরের একটি কথা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "সত্যের সন্ধান দিয়ে আমি কুসংস্কারের ডালপালা ছেঁটে দিয়েছি। আর 'সৃষ্টির রহস্য' দিয়ে কুসংস্কারের মূলশুদ্ধ উপড়ে দিয়েছি"। সৃষ্টির রহস্য -রচনাসমগ্র ২য় খণ্ডের প্রথম বই। মূলত তাঁর সকল আপত্তি প্রথম দু'খণ্ডে এসে গেছে। প্রথম খণ্ডের 'সত্যের সন্ধান' ও 'অনুমান' বইয়ে প্রথম খণ্ডের সকল আপত্তি একীভূত হয়ে গেছে। অন্যান্য বই এ দু'টির সংক্ষিপ্তসার। তাই "ভাবনা বিচার" প্রথম ও দ্বিতীয়ে খণ্ডে এই দু'টির পর্যালোচনা করা হয়েছে। আর তৃতীয় খণ্ডে রয়েছে রচনা সমগ্র দ্বিতীয় খণ্ডের পর্যালোচনা।
৪
"সত্যের সন্ধান" পুরোটাই প্রশ্ন। শতাধিক প্রশ্নের সমাহার রয়েছে এ বইয়ে। অন্যান্য বইয়ে আলোচনাধর্মী আপত্তি বেশি। তাই আলোচনার সুবিধার্থে "ভাবনা বিচার" প্রথম দু'খণ্ড তিনটি চরিত্রের আলাপচারিতার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। তৃতীয় খণ্ড আবার এরূপ নয়। সঙ্গত কারণে এটি আগে লিখেছিলাম। আর তখন এরূপ ভাবিনি।