২৫ মার্চ, ১৭০৯ তারিখে প্যারিসের একটা বাড়িতে সন্ধ্যায় এক যুবকের একটা গল্পের চরিত্র ছিল দৈত্য, জিন আর আলাউদ্দিন। সেই গল্প শুনে সঙ্গের খাতায় লিপিবদ্ধ নিলেন প্রাচ্যবিদ আঁতোয়া গ্যাল্যাঁ। তা থেকেই পরে জন্ম নিল ‘আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ গল্পের লিখিত রূপ।
এর আগেই গ্যাল্যাঁর অনুবাদে প্রাচ্যের বিখ্যাত বই ‘আরব্য রজনী’র কয়েক খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু গ্যাল্যাঁ আর গল্প পাননি কারণ তাঁর সঙ্গে থাকা পুঁথিতে আর গল্প নেই।
সমস্যার সুরাহা হল লুকাচের বাড়িতে, ওই যুবকের গল্প শুনে। যুবকটির নাম হানা দিয়াব। আলেপ্পোর এক বস্ত্র-ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে দিয়াব ১৭০৮ সালে প্যারিসে আসেন, লুকাচের সঙ্গেই। যুবকের গল্প বলার কায়দা চমৎকার। মার্চের সেই সন্ধ্যায় আলাদিনের গল্প ছাড়াও আরও কয়েকটা গল্প দিয়াবের মুখে শোনেন গ্যাল্যাঁ আর লুকাচ। একটা গল্প এক গরিব কাঠুরিয়া, তাঁর ধনী ভাই, এক দল চোর আর এক দাসীকে নিয়ে। ‘আরব্য রজনী’ বইয়ে গল্পটা ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ নামে বিখ্যাত। গ্যাল্যাঁ সে দিন এই গল্পটারও নোট নিয়েছিলেন। কিন্তু আসল সত্য এই, আলাদিন বা আলিবাবা ও চল্লিশ চোর— এই দু’টি জনপ্রিয় গল্পের উল্লেখ কোনও আরবি পুঁথিতে নেই। কারণ গল্পগুলো দিয়াবের গল্প । গবেষকদের ভাষায়, ‘অরফ্যান টেলস’।
এ ভাবেই দিয়াবের মুখে শোনা গল্পের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ভাষায় ‘আরব্য রজনী’র প্রথম সার্থক অনুবাদক হলেন আঁতোয়া গ্যাল্যাঁ। ১৭০৪-১৭১৭ সালের মধ্যে মোট বারো খণ্ডে অনুবাদের কাজটি সম্পূর্ণ করেন তিনি। গ্যাল্যাঁর সঙ্গে মোট বারো বার আড্ডায় দিয়াব ষোলোটি গল্প বলেন। তার মধ্যে দশটি গল্পকে গ্যাল্যাঁ স্থান দিলেন তাঁর অনূদিত ‘আরব্য রজনী’র দশম থেকে দ্বাদশ খণ্ডে। তাঁর অনুবাদে ‘আরব্য রজনী’র জলহাওয়ায় কোথাও কোথাও উঁকি দেয় তখনকার ফ্রান্সও। দিয়াবের কাছে শোনা ‘রাজকুমার আহমেদ ও পেরি-বানু’র গল্পে যে বিলাসবহুল প্রাসাদ আর বিপুল ঐশ্বর্যের বর্ণনা, তা মনে করায় ফরাসি শাসক লুই দ্য গ্রেট-এর আমলের বিখ্যাত ভার্সাই প্রাসাদকে।
কিছু বিখ্যাত আরব্য রজনীর গল্প
আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ
আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
নাবিক সিন্দাবাদ
তিনটি আপেল
কাঠুরে ও জলপরী
দুই রাজপুত্রের গল্প
কিশোর কাজি
রকিব হাসান
রকিব হাসান বলেন আমার কাজটাই হলো যেটা তুঙ্গে ওঠে, সেটা ছেড়ে দেওয়া। তিনি আরো বলেন লিখেছি অনেক, এত জনপ্রিয় হবো ভাবিনি।
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর; কুমিল্লায়। তবে বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ছেলেবেলা কেটেছে ফেনীতে। ফেনী থেকেই স্কুলজীবন শেষ করে তিনি ভর্তি হন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নিয়মমতো যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতেই। কিন্তু কোথাও মন টেকেনি বেশি দিন। তাই একে একে বদলেছেন বেশ কটা চাকরি। অনেক চেষ্টার পরও অফিসের বাঁধাধরা নয়টা-ছয়টার ঘড়ির কাঁটায় আটকে থাকতে পারেননি। অবশেষে সব ছেড়েছুড়ে লেখালেখি শুরু করলেন একদিন। লেখক সত্তার সঙ্গেই নিজের অচ্ছেদ্য বন্ধন টের পেলেন। তারপর তো লেখালেখিকে বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। হলেন পুরোদস্তুর লেখক। আজ কয়েক প্রজন্মের পাঠকের কাছে জনপ্রিয় তিনি। লেখালেখির শুরুটা সেবা প্রকাশনীতে। বিশ্বসেরা ক্লাসিক বইয়ের অনুবাদ দিয়ে শুরু করেছিলেন। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়।
রকিব হাসান এর বই সমূহ
তিন গোয়েন্দা ভলিউম, কিশোর মুসা রবিন সমগ্র, মায়াসুড়ঙ্গ : সাইন্স ফিকশন, হাইপারসনিক রহস্য, রহস্যের দ্বীপ, আরব্য রজনীর গল্প ইত্যাদি।