

আরেক ফাল্গুন
(জহির রায়হান সিরিজ-২) নামঃ আরেক ফাল্গুন ধরনঃ উপন্যাস লেখকঃ জহির রায়হান প্রেক্ষাপটঃ ভাষা আন্দোলন সম্পন্ন হবার পর বাংলাদেশের মানুষ তা উদযাপনের উপলক্ষ পায় নি। দোসর পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের ছাত্রদের উপর নানা নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আর এই উপন্যাস টিও সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটের উপরেই। বাঙালি ছাত্র সমাজ তার আপন অধিকার কে আদায় করে নেবার প্রতি নিজেদের কে কতটা বিসর্জন দিতে হয়েছে তারই গল্প গাঁথা উপস্থাপন করেছেন লেখকের আপন মহিমায়। চূর্ণ চূর্ণ কথা গুলোই একেক টা গাঁথুনির উপর গাঁথুনি দিয়ে পূর্ণ করেছেন লেখক। তার এই মুন্সিয়ানায় উপন্যাস টি হয়ে উঠেছে পাঠক প্রিয়। উত্তাল দিন গুলোয় ছাত্রদের আত্মগোপন। তাদের আন্দোলন পরিচালনা কৌশল, নেতাদের দূরে রেখে নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, এরই মধ্যে আবার গুপ্তচরবৃত্তি, পুলিশী নির্যাতন এবং জেল গমনের নানা পদে পদে বিপদ কে হীন জ্ঞান এগিয়ে যাওয়া রাইফেলের সামনে নিজেকে উজার করে চেতনা কে সমুন্নত রাখার গল্পকেই লেখক তুলে ধরেছেন তার এই উপন্যাসের মধ্যে। এরও মাঝে প্রেম, রোমান্স, নীতির কাছে প্রেমের নত স্বীকার। সস্তা প্রেমের কাছে যৌবন বিলিয়ে দেয়া এবং শেষে গিয়ে নিজেকে আবার আবিষ্কার করা। এসবই উপজীব্য কাহিনী হয়েছে উপন্যাসের। উপন্যাস টি বাঙালির দৃঢ় চেতনা কে আশ্রিত করেছে পদে পদে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত এ উপন্যাস টি তাই সময়ের দাবি পূরণে সফল হয়েছে সদর্পে। . কাহিনীঃ উপন্যাসের কাহিনী টি এক ফাল্গুনের। ঠিক এমনই এক ফাল্গুনের সকালে শহীদ হয়েছিলো শফিক, রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকতেরা। তাদের এই আত্মত্যাগ কে বাঙালি স্মরণ করে আসছে সেই থেকেই। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এই উদযাপন এতো সোজা ছিলো না। তাই লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার এক গল্প সাজিয়ে তুলেছেন লেখক। একটি যুবক খালিপায়ে হেটে চলছে দেখে সবাই তার দিকে তাকায় জিজ্ঞাসু চোখে। নানা পথ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যত এগতে থাকে ততই লোক জর হতে থাকে তাদের দলে। তার এই এগিয়ে চলার সঙ্গি হয়ে বিশাল এক জনসমাগম শুরু হয়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের এই আয়োজন। এদিকে মুনিম ডলি কে ভালবাসে,ডলির জন্মদিনে আমন্ত্রিত মুনিম খালি পায় দেখে ইতস্তত বোধ করে সকলের সামনে নিয়ে যেতে। পরে ডলির বাবার সেন্ডেল দিতে চাইলেও নারাজ হয় মুনিম এভাবে দুরত্বের শুরু। পরে মুনিম কে সাথে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে চাইলে মুনিম সাফ জানিয়ে দেয় তার মিটিং আছে। জোর করেও কাজ না হলে ডলি জানায় মুনিম যদি চলে যায় তাহলে আর ফিরে না আসে। তবুও মুনিম বেরিয়ে যায়। তখন ডলি তার ফুপাতো ভাই বজলে হোসেনের সাথে সিনেমায় যায় একসময়ে তাদের শারীরিক সম্পর্কে গড়ে ওঠে বজলের বন্ধু মাহমুদের বাসায়। মাহমুদ সরকারি গুপ্তচর ও একজন জোচ্চর মেয়েদের ঠকিয়ে দেহ ভোগ করে তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করাই তার কাজ। সাহানা তার সাথে বর্তমানে আছে। ডলি কে বজলে বলে তারা স্বামী স্ত্রী। একদিন সকালে মাহমুদ বজলে হোসেন কে ডেকে মুনিম সম্পর্কে জানতে চায়। বজলে তা গোপন করেন এবং এও জানতে পারেন যে সাহানা মাহমুদের সাথে সব সম্পর্ক গুটিয়ে চলে গেছেন। এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি তে ব্যাপক ধরপাকড় চালালে আন্দোলনের সব নেতারাই প্রায় গ্রেফতার হন। তাদের নিয়ে রাখা হয় একটা খোলা মাঠে। ওদিকে বিকেলে বজলে হোসেন রেস্তোরাঁয় চা খেতে গিয়ে সাহানার সাথে দেখা হয়। তখন চা শেষ করে উঠে আসবার আগে সাহানার আবেদনে সারা দিয়ে সাহানার বান্ধবীর সেগুনবাগিচার ফাঁকা বাসায় রাত কাটাতে উদ্যত হয়। এদিকে ডলির নিজের ভুল বুঝতে পেরে গ্রেফতার হওয়া মুনিমের সাথে দেখা করতে যায় মুনিমের ডলি কে ফিরে পাবার আত্মতৃপ্তির মধ্যে দিয়ে উপন্যাসের ইতি টানা হয়। . পর্যালোচনাঃ বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল ক্ষেত্র হলো আমাদের ভাষা আন্দোলন, কিন্তু তবুও বাংলা সাহিত্যে এই জমিন টি কেন যেন উপেক্ষিত থেকে গেছে কথা সাহিত্যিকদের কাছে। যা আমাদের জন্য আতঙ্কের। তবুও যে অল্প সংখ্যক কাজ আমাদের আশার আলো দেখায়। তার মধ্যে "আরেক ফাল্গুন" উপন্যাস টি অন্যতম। এই উপন্যাসের প্রতিবন্ধকতার সবচেয়ে বড় দিক টি হলো এর গল্প টি ছোট হলেও নানা চরিত্রের দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি গল্প। তাই পড়তে গিয়ে বাধা পরতে হয় বারবার। কারন কখন কার গল্প থেকে কার গল্পে পদার্পন করি তার দিশা পাওয়া মুসকিল। আর কাহিনী ছোট হওয়াতে কোন চরিত্রই তেমন বিকাশ পায়নি স্বাধীন ভাবে। আমার এই পাঠ প্রতিক্রিয়ায় উপস্থাপিত কাহিনী টি কেবল ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দুটি গল্পের একটি মিলন টেনেছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তার পূর্ণাঙ্গ কাহিনী উপস্থাপন করতে গেলে আরো অনেক ছোট ছোট গল্পই উঠে আসবে। রাহাত, আসাদ, সবুর, নিলা, বেনু, রওশন ইত্যাদি আরো অনেক ছোট ছোট চরিত্র। তাই এর সম্পর্কে একটি কথাই বলতে পারি। তা হলো এই উপন্যাস টি সময়ের দাবি হয়তো মিটিয়েছে সফল ভাবেই। কিন্তু তা উৎকৃষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠতে পারেনি। এর বক্তব্য বুঝতে পারলেও তার বিন্যাস অস্পষ্ট মনে হয়েছে আমার কাছে। তাই এই উপন্যাস ইতিহাস আছে সাহিত্য সেই মাপে হয়তো আমার কাছে অনুপস্থিত মনে হয়েছে।
SIMILAR BOOKS
