সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলেকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে। সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।
নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন
মােহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন (১৮৬০-১৯২৩) একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক। তিনি পাবনা জেলার শাহজাদপুরের চরবেলতৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার নর্মাল স্কুল থেকে পাস করে প্রথমে তিনি জলপাইগুড়ির একটি নীলকুঠিতে চাকরি করেন। পরে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের ভাঙ্গাবাড়ি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়, সলঙ্গা মাইনর স্কুল ও রাজশাহী জুনিয়র মাদ্রাসায় চাকরি করেন। কিছুদিন তিনি ডাকঘরে পােস্টমাস্টারের দায়িত্বও পালন করেন। নজিবর রহমান ১৮৯২ সালে স্বগ্রামে একটি মক্তব স্থাপন করেন যা পরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। তিনি যখন সলঙ্গায় শিক্ষকতা করতেন তখন সেখানকার হিন্দু জমিদার গাে-হত্যা ও গাে-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করলে তিনি তার প্রতিবাদ করেন, ফলে সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়। নজিবর রহমান ইসমাইল হােসেন সিরাজী’র (১৮৮০-১৯৩১) প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় সাহিত্যকর্মে ব্রতী হন। প্রথম সামাজিক উপন্যাস ‘আনােয়ারা’ (১৯১৪) লিখে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর অন্যান্য উপন্যাস : প্রেমের সমাধী (১৯১৫), চাঁদতারা বা হাসান গঙ্গা বাহমণি (১৯১৭), পরিণাম (১৯১৮), গরীবের মেয়ে (১৯২৩), দুনিয়া আর চাই না (১৯২৪) ও মেহেরুন্নিসা। তাছাড়া রয়েছে বিলাতী বর্জন রহস্য (১৯০৪) ও সাহিত্য প্রসঙ্গ (১৯০৪) শীর্ষক দুটি আলােচনা গ্রন্থ। নজিবর রহমান তাঁর উপন্যাসে গ্রামীণ মুসলিম পরিবারের অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন। ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর রায়গঞ্জের হাটি কুমরুল গ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়।
আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামান (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ - ১৪ মে ২০২০) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯), এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘আমার একাত্তর’, এবং ’সোশ্যাল এস্পেক্টস অব এন্ডোজেনাস ইন্টেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি’। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে একুশে পদক, ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।