এঞ্জেলস্ অ্যান্ড ডেমনস্
শেষ করলাম ড্যান ব্রাউনের “ এঞ্জেলস্ অ্যান্ড ডেমনস্” । চার বছর বইটি ফেলে রেখেছিলাম। পড়ি পড়ি করেও পড়া হয়নি। লকডাউনের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে দিলাম। পড়া শেষে মনে হলো এই অমৃত চার বছর আগেই পান করা উচিত ছিল। যাই হক। বহুদিন ধরে ইলুমিনেটি জিনিসটা সম্পর্কে শুনে আসছিলাম। এই বইটা পড়ার মাধ্যমে ইলুমিনিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে প্রথম থেকেই একটা বিরোধ ছিল। খুন হয়ে গিয়েছে কোপার্নিকাসের মত বিখ্যাত সব বিজ্ঞানীরা। সায়েন্টিফিক ট্রুথ উদ্ধার করার অপরাধে চার্চের রোষানলে পড়তে হয়েছিল তাদেরকে। ধর্ম সবসময় বিজ্ঞানকে ধাওয়া করে। কিন্তু ষোড়শ শতকে একদল লোক গির্জার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। পদার্থবিদ, গণিতবিদ, জোর্তিবিদসহ ইতালির বিখ্যাত সব লোকেরা গোপনে দেখা করতে থাকে একে অপরের সাথে। চার্চ আক্ষরিক অর্থেই পুরো পৃথিবীর জিজ্ঞানকে ধূলোর সাথে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তখনই পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী বিজ্ঞান মনস্ক মানুষেরা এক সুতোয় বেঁধে ফেলেন নিজেদের । নাম দেয়-আলোকিত। “দ্য ইলুমিনেটি”। পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি ছিলেন একজন ইলুমিনেটাস। বলা হয় তিনি হচ্ছেন ইলেমিনেটির জ্ঞানগুরু। এখানেই শেষ নয়, ক্যাথলিকের ওপর একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন গ্যালিলিও। মধ্যযুগে ধর্মকে বিজ্ঞান থেকে আলাদা করেই ক্ষান্ত হয়নি চার্চ। বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় গ্যালিলিওকে। দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁকে। বন্দি করে রাখা হয় বাসায়।গ্যালিলিওকে যখন আটকে রাখা হয়, সে সময় ইলুমিনেটি একটু বেসামাল অবস্থায় চলে যায়। ছোট একটু ভুল করায় ইলুমেনিটের চারজন বিজ্ঞানীকে পেয়ে যায় চার্চ। চারজন বিজ্ঞানীকে প্রশ্ন করা হলে তারা একটা প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি। ফলে জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁদের প্রত্যেকের বুকে একটা ছাপ দেয়া হয়। ওটা ছিল একটা ক্রস। সবশেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় সেই বিজ্ঞানীদের। রোমের রাস্তায় ফেলে রাখা হয় তাঁদের লাশ। চার্চের অকথ্য নির্যাতনে শেষ পর্যন্ত ইতালি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় ইলুমিনেটি। এরপর থেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় ইলুমিনেটি।ক্যাথলিকদের হাতে শুধু ইলুমিনেটি নয়, সেই সঙ্গে আরও অনেক দলই হেনস্ত হয়েছে। কাজেই সেই দলগুলো এবার যোগ দিল ইলুমিনেটির সঙ্গে। এরকম কয়েকটা দল হচ্ছে-মিস্টিক, এ্যালকেমিস্ট, অকাল্টিস্ট,মুসলিম আর ইহুদি। তারপর নতুন এক ইলুমিনেটির উদয় হয়। ওটাকে বলা হতো অন্ধ ইলুমিনেটি। আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে আগের ইলুমিনেটির সঙ্গে এই ইলুমিনেটির কোন সম্পর্ক ছিল না। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। রোম থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ইলুমিনেটি টিকে গিয়েছিল। সে সময় পুরো ইউরোপ চষে বেড়ায় তারা। হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছে লুকানোর জায়গা। আর সেই জায়গা খুঁজতে গিয়েই আরেকটা নতুন গোপন সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় তারা। নতুন সেই সংঘের নাম ছিল “দ্যা ম্যাসনস” পৃথিবীতে অর্ধ-কোটিরও বেশি ম্যাসন আছেন। তারমধ্যে অর্ধেকই আছেন আমেরিকায়। ইউরোপে আছে কমপক্ষে এক মিলিয়ন ম্যাসন। এভাবে প্রথম দিকে পরজীবির মতো বেঁচে থাকে ইলুমিনেটি। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, এভাবে পরজীবী হয়ে থাকতে থাকতেই একে একে ম্যাসনের সব পোষ্ট নিজেদের দখলে নিয়ে নে তারা। কেউ কিচ্ছুটি টের পায়নি। এটা শুরু হয় সতেরশ সাল থেকে। ইউরোপ থেকে তাঁদের দৃষ্টি পড়ে আমেরিকার ওপর। যেখানে বেশির ভাগ নেতাই ছিলেন ম্যাসন। তাদের মধ্যে দু’জনের নাম হলো-জর্জ ওয়াশিংটন এবং বেন ফ্র্যাঙ্কলিন। তবে সামরিক পথে নয়, ইলুমিনেটি নিজেদের আওতা বাড়াবার জন্যে সবার আগে টার্গেট করে ব্যাঙ্ক আর ইউনিভার্সিটিকে। একের পর এক প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের দখলে নিয়ে আসেন তারা। নতুন জন্ম নেয়া ইলুমিনেটির লক্ষ্য ছিল একটাই-অভিন্ন এক পৃথিবী বানানো। একটা পৃথিবী, এক রাষ্ট্র, একটা আদর্শ বা অন্যভাবে বলা যায় ধর্মনিরপেক্ষ এক আর অভিন্ন দুনিয়া। এক বিজ্ঞানী এক সূত্র আবিষ্কার করেন। ইলুমিনেটির সূত্র। নাম“ দ্যা সাইনো”। এই সাইনো গুলো দেখলে যেকোন মানুষ অবাক হবে। কারণ এই সাইন গুলো উপরে নিচে করলে একই রকম লাগে। দুর্বোধ্য এই সাইনগুলোর কিছু বইয়ের ঘটনার সাথে মিল পাওয়ার ফলে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন পৃষ্ঠায়। তবে প্রায় চারশ বছর পর ইলুমিনেটি কেন এতো ভয়ানক হয়ে উঠলো তার উপর ভিত্তি করেই সম্পূর্ণ বইটি লেখা হয়েছে। পদে পদে উন্মোচন করা হয়েছে একের পর এক রহস্য। এছাড়ও পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি সম্পর্কে জানতে পারবেন নানান তথ্য। ইতালির রোম আর ভ্যাটিকান সিটির বিভিন্ন স্থান নিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো ঘটনা। রহস্যের এক গভীর সমুদ্রে ডুবে যাবেন বইটি পড়লে। ধন্যবাদ সবাইকে । আমি বইয়ের রেটিং দেইনা।