অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিকট নিখাদচিত্তে তাওবাহ কর।” (সূরা আত্-তাহরীম ৮)
সম্মানিত লেখক ফেরেশতাগণ কর্তৃক ‘আমালনামায়/লেখার পূর্বে আল্লাহ্ আমাদের তাওবার সুযোগ দিয়েছেন।
মহানাবী (স:) বলেছেন :
ان صاحب الشمال ليرفع القلم ست ساعات عن العبد المسلم
المخطىء، فان ندم واستغفر الله منها القاها والا كتبت واحدة.
বাম দিকের ফেরেশতা অবশ্যই ভুলকারী মুসলিম বান্দা হতে ছয় প্রহর (১) কলম উঠিয়ে রাখে। যদি সে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চায় তাহলে সে পাপটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তা না হলে একটি পাপ লিখে।(২) আরেকটি সুযোগ হল লেখার পরে এবং মরণকাল আসার আগে।
(১) প্রহর বলতে দিন অথবা রাতের সংক্ষিপ্ত সময় ।
(২) তাবারানী আল কাবীরে এবং বায়হাকী শুয়াবুল ঈমানে এটি বর্ণনা করেছেন । আল বাণী (রহঃ) এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
আজকাল অনেক লোকের সমস্যা হল, তারা আল্লাহকে কোন মর্যাদা দেয় না। রাত দিন বিভিন্ন পাপে ডুবে তার নাফারমানী করে। এদের মধ্যে কিছু লোক পাপকে ছোট মনে করে। আপনি দেখবেন, তাদের কেউ কেউ সগীরা গোনাহকে (ছোট পাপ) তুচ্ছ মনে করে। যেমন তারা বলে, কামাষক্তি ছাড়া অন্য নারীদের দিকে তাকালে অথবা তাদের সাথে মুসাফা করলে কী ক্ষতি?
এরা ম্যাগাজিনে ও ধারাবাহিক নাটকে যে সকল নারীর দিকে তাকানো হারাম তাদের দেখে আনন্দ পায়। এমনকি তাদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে, এভাবে তাকানো হারাম তখন হাল্কাভাবে প্রশ্ন করে, এতে কী পরিমাণ পাপ আছে? এটি কি কাবীরাহ গোনাহ না সগীরাহ? এ বাস্তব অবস্থা জানার পর এটিকে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত দুটির সাথে তুলনা করুন :
অর্থ : আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের চোখে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। আমরা রসূলের যুগে ওগুলোকে ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে গণ্য করতাম।
অর্থ : ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় মু’মিন তার পাপকে এমনভাবে দেখে যেন সে একটি পাহাড়ের নিচে আছে। ওটি তার উপর পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে ভীত। অপরদিকে, পাপাচারী তার পাপকে এমন একটি মাছির মতো মনে করে যা তার নাকের ওপর দিকে উড়ে। তখন সে তার হাত দিয়ে এটি তাড়িয়ে দেয়। এরা কি রসূল হাদীসটিতে বর্ণিত ভয়াবহতাকে এখন পরিমাপ করতে পারবে?
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
অর্থ : তোমরা পাপকে তুচ্ছ মনে করা হতে সতর্ক থাকবে। কারণ, পাপকে তুচ্ছ মনে করাটা এমন এক সম্প্রদায়ের মতো যারা এক উপত্যকার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থান নিল। এরপর এ ব্যক্তি একটি বড়ি নিয়ে এল। ও ব্যক্তি একটি খড়ি নিয়ে এল। এমনকি তারা রুটি তৈরি করার জন্য অনেক বাড়ি বয়ে নিয়ে এল। যে পাপকে তুচ্ছ জ্ঞান করে তাকে যখন পাকড়াও করা হবে তখন এটি তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, পাপকে তুচ্ছ মনে করা থেকে সাবধান! কারণ, ওগুলো একত্র হয়ে পাপীকে ধ্বংস করে ফেলবে।
বিদ্বানগণ বলেছেন, সগীরাহ বা ছোট পাপের সাথে লজ্জার স্বল্পতা, লা-পরোয়া মানসিকতা এবং অবহেলায় আল্লাহকে ভয় না করার বিষয়টি জড়িত থাকে যেমনভাবে জড়িত থাকে কবীরাহ যা বড় পাপের সাথে। বরং এগুলো ছোট পাপকে বড় পাপে পরিণত করে। এ কারণেই বার বার করলে কোন পাপকে ছোট পাপ বলে গণ্য করা যায় না। তেমনিভাবে ইস্তিগফার করলে বা ক্ষমা চাইলে কাবীরাহ বা বড় পাপ মোচন হয়ে যায়।
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
যার এ অবস্থা তার উদ্দেশ্যে আমাদের কথা হল :
নাফারমানীর ক্ষুদ্রতার দিকে তাকাবেন না, বরং যার নাফারমানী করলেন তাঁর দিকে তাকাবেন।
এতটুকু কথাতেই ইনশাআল্লাহ্ সত্যপরায়ণদের উপকার হবে যারা পাপের ভয়াবহতাকে অনুভব করতে পারেন। আর যারা গোমরাহা এবং বাতিল বা অন্তঃসারশূন্য কাজে অটল থাকে তারা এ থেকে উপকৃত হতে পারবে না।
এ কথামালা তাদের জন্য যারা আল্লাহ্ নিম্নোক্ত বাণীর উপর ঈমান এনেছেন :
অর্থ : “আমার বান্দাদের এই মর্মে সংবাদ দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়াময়।” (সূরা আল হিজর ৪৯)
আরো ঈমান এনেছেন এ কথার উপর:
অর্থ : “আর আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আল হিজর ৫০) তাওবার শর্তাবলী ও তার পরিপূরকসমূহ তাওবাহ শব্দটি একটি মহান শব্দ। এর গভীর অর্থ রয়েছে অনেকেই যেমন মনে করে তেমন নয়। শুধু মুখে উচ্চারণ করল আর পাপের উপর অবিচল থাকল তা নয়।