আমি বীরাঙ্গনা বলছি
নূর মোহাম্মদ,মহিউদ্দিন,মতিউর,আব্দুর রউফ,মোস্তফা কামাল,হামিদুর রহমান ও রুহুল আমিন-এসব কোনো অজ্ঞাতনামা নয়,সাত বীরশ্রেষ্ঠেরই নাম।'৭১ এর কথা উঠলেই হয়তো অনেকের চোখে এই বীরের নামগলো সর্ব প্রথম ভেসে উঠে।কিন্তু '৭১ কি শুধু এদের নিয়েই? শুধু এদের বীরগাথার দ্বারাই কি বাংলাদেশ রচিত? স্বাধীনতার আঁচলে আমাদের মা-বোনদের কি কোনো স্পর্শই নাই? ২৫ শে মার্চের পর থেকে যখন পাকিস্তানি দুস্যরা গণহত্যা শুরু করে,শহর-গ্রামগঞ্জে লুটপাট শুরু করে তখন কি তারা আমাদের মা-বোনদের আপনা আপনিই ছেড়ে দেয়? না! কখনোই না! নজরুলের কন্ঠে বলতে চাই- "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।" এক্ষেত্রেও তাই! পাকিস্তানিরা আমাদের ভাইদের গুলি করে মেরেছে কিন্তু মা বোনদের বাঁচিয়ে রেখেছে মুমূর্ষ অবস্থায়....না বাঁচা যায়,না মরা যায়! তৎকালীন সময়ে এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের মা-ভগ্নী-স্ত্রীদের, এককথায় সম্পূর্ণ নারী জাতির! ভিনদেশী গুন্ডারা তাদের সম্মুখেই পিতা-ভ্রাতার উপর অস্ত্র ধরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং তাদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে বাঙ্কারে! বাঙ্কারে গিয়েই তাদের সামনে উন্মুক্ত হয় সেই বর্গিদের আসল রূপ! কোন নারীই ছাড় পেল না সেসব ক্ষুধার্ত জানোয়ার থেকে!সেই জানোয়ারগুলো ইচ্ছেমতো ক্ষুধা মিটিয়েছে অট্টহাসি ও ভয়ংকর লালাময় চেহারা নিয়ে! বিপরীতে সে নারীরা কিঞ্চিৎ শব্দও করতে পারিনি! সে দশ মাস কতই না আর্তনাদ চারদিকে কিন্তু কিছুই শোনা যায়নি কেননা দস্যুরা শুনে ফেললে সীমা পেরিয়ে অত্যাচার করে যে মেরে ফেলবে! যুদ্ধের আগে সবারই শান্তির জীবন বিরাজমান ছিল, যুদ্ধ আসতেই তা কোথায় উধাও হয়ে যায়! শুরু হয় নীরবে দৈহিক নির্যাতন,নিপীড়ন ও অত্যাচার সহন করার অধ্যায়! হাজারো নারী সাক্ষী এসব দুর্দশার! দশ মাস শত্রুদের হাতে বন্দী থেকে, মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা একজন নারীর জন্য কোনো মামুলি ব্যাপার নয়! পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ও সমাজ কি আদৌ তাকে গ্রহণ করবে,না ফেলে রাখবে নিকৃষ্ট সমালোচনার চার গন্ডিতে তাও কিন্তু ভাবার বিষয়!হুমম! বীরাঙ্গনারাও ভেবেছেন তাইতো তারা আত্মহত্যার পথ না বেছে,আরেক যুদ্ধে নেমে পড়লেন! যে যুদ্ধ ছিল পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে! যে যুদ্ধ ছিল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং এক সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়! আহ!এমনই ছিল বীরাঙ্গণাদের বীরগাথা! পবিত্র মাটির জন্য নিজের পবিত্র দেহে মলিনতা লাগিয়েছিল তারা! বীরদের নিয়ে অনেক পড়লেন,আজ বীরাঙ্গনাদের নিয়ে একটু পড়ে দেখুন! সত্যিই! অসাধারণ, তারা! তাদের চিন্তাভাবনা! তাদের মনোবল! তারা ব্যানার্জি(মিসেস টি নিয়েলসন), মেহের,রিনা শেফালী,ময়না ফাতিমা ও মিনা... সত্যিই তারা অনন্য! এই সাত অনন্যাকে নিয়েই নীলিমা ইব্রাহিমের অখন্ডিত ও অসামান্য গ্রন্থ..."আমি বীরাঙ্গনা বলছি"!