বেপরােয়া ও অপ্রতিরােধ্য, দুঃসাহসী অথচ সংযত ও সহিষ্ণু ৬৩ বছর বর্ষীয় 'চির যুবা এম আর আখতার মুকুল-সেই যে ছােটবেলায় বাঙালি ঘরাণার রেয়াজ মাফিক দু'দু'বার বাড়ি থেকে পলায়ন-পর্ব দিয়ে শুরু করেছিলেন জীবনের প্রথম পাঠ-তারপর থেকে আজ অবধি বহু দুস্তর ও বন্ধুর চড়াই-উৎ্রাই, বহু উত্থান-পতন ও প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হলেও আর কখনও তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি; রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছ পা হননি কোনও পরিস্থিতিতেই। যা আছে কপালে, এমন একটা জেদ নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন অকুতােভয়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তার বিজয়ী মুকুটে যুক্ত হয়েছে একের পর এক রঙ্গিন পালক।
এম আর আখতার মুকুল
এম আর আখতার মুকুল-এর জন্ম ১৯৩০ সালে বগুড়া জেলার গড় মহাস্থানে। অনেক ক'টা স্কুলে পড়াশােনা করা ছাড়াও ছাত্র জীবন থেকে তিনি দারুন ‘ববাহেমিয়ান' চরিত্রের। বাড়ি থেকে পলায়ন ছিল তার মজ্জাগত। ১৯৪৫-৪৬ সাল থেকে ছাত্র-রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালে তিন দফায় রাজবন্দী ছিলেন। ১৯৪৯ সালে একটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে দিনাজপুর জেল থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কারামুক্তির পর আইন অধ্যয়নের জন্য ঢাকায় আগমন এবং ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। জীবিকার তাগিদে নানা ধরনের পেশা ও ব্যবসায়ে জড়িত হয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। সাংবাদিকতা পেশায় নিয়ােজিত ছিলেন প্রায় দুই যুগের মতাে। রিপাের্টার হিসেবে শেরেবাংলা মওলানা ভাসানী, সােহরাওয়ার্দী ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান তাজউদ্দীন ও বঙ্গবন্ধুর মতাে ঐতিহাসিক ও কালজয়ী নেতাদের সফরসঙ্গী হয়েছেন। সাংবাদিক হিসেবে ঘুরেছেন অসংখ্য দেশ। প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রবাহের। বঙ্গবন্ধুর উষ্ণ সান্নিধ্য ও ভালবাসা তাঁর জীবনের অবিস্মরণীয় স্মৃতি। আর সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ অধ্যায় মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক এবং লেখক ও কথক হিসেবে সাড়া জাগানাে চরমপত্র অনুষ্ঠান। পরিচালনা। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রায় দেড় যুগের মতাে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরি করেছেন। ১৯৮৭ সালে অবসর প্রাপ্ত। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন। নানা ব্যস্ততার মাঝেও মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও বাংলাসাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা বিশ।