ভয়াবহ এক অভিযোগ তুলে নির্যাতন করা হয়েছিল তাকে। বের করে দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস থেকে। বাঁচার তাগিদে সে একসময় যোগ দেয় নির্যাতকদের দলে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। জেলখানায় প্রিয় বন্ধুর পরিণতি জেনে একসময় মুখোমুখি হয় নতুন জিজ্ঞাসার।
‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে তুমি কীভাবে করো স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠন?’
‘স্যার, আমি করি না। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যে শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব।’
প্রক্টর স্যার হুংকার দিয়ে ওঠেন।‘কী প্রমাণ চাও তুমি? তোমার ফোন পরীক্ষা করেছে ছেলেরা। অবশ্যই তুমি স্বাধীনতাবিরোধীদের লোক।’
আমি চিত্কার করে উঠি, ‘এসব সত্যি না, স্যার।’
‘তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করো! আবার তোমার এত বড় সাহস, তুমি ফোন করো আমাকে!’
‘স্যার!’ আমি কেঁদে ফেলি এবার। ‘তাহলে কার কাছে যাব, স্যার?’
তিনি তিক্ত কণ্ঠে পাকিস্তানের নাম বলেন, সেখানে চলে যেতে বলেন। পাকিস্তানের সাথে আমার কী সম্পর্ক, কেন সেখানে যাব, কিছুই বুঝতে পারি না। বিস্মিত হয়ে বলি, ‘কই যাব, স্যার!’
‘পাকিস্তান! পেয়ারা পাকিস্তান!’ নাটুকে ভঙ্গিতে এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
আমি আবু বকর এই সময়ের বিব্রতকর কাহিনি।
আসিফ নজরুল
আসিফ নজরুল জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৬৬, ঢাকার লালবাগে। সাংবাদিক হিসেবে একসময় তাঁর বহুল পরিচিতি ছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে উপন্যাস লেখা শুরু করেন। সে সময়ে নিষিদ্ধ কয়েকজন, ক্যাম্পাসের যুবক, আক্রোশসহ তার বিভিন্ন উপন্যাস পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। সম্ভাবনাময় একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি আলােচিতও ছিলেন। ১৯৯৪ সালে পিএইচডি করতে লন্ডনে যাওয়ার পর তার সৃজনশীল লেখালেখি থেমে যায়। ১৯৯৯ সালে দেশে ফেরার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথম আলাের কলামিস্ট ও টিভি টক-শাের আলােচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। গত কয়েক বছরে কিছু ছােটগল্প লিখলেও দীর্ঘ বিরতির পর উপন্যাস লিখেছেন— অসমাপ্তির গল্প ।