"আমি এবং আমরা"বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
মিসির আলি দু’ শ’ গ্রাম পাইজং চাল কিনে এনেছেন। চাল রাখা হয়েছে একটা হরলিক্সের কৌটায়। গত চার দিন ধরে তিনি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছেন। চায়ের চামচে তিন চামচ চাল তিনি জানালার পাশে ছড়িয়ে দেন। তারপর একটু আড়াল থেকে লক্ষ করেন – কি ঘটে। যা ঘটে তা বিচিত্র। অন্তত তার কাছে বিচিত্র বলেই মনে হয়। দুটা চড়ুই পাখি চাল খেতে আসে। একটি খায়, অন্যটি জানালার রেলিংএ গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে থাকে। ব্যাপারটা রােজই ঘটছে।
পক্ষীসমাজে পুরুষ স্ত্রীপাখির চেয়ে সুন্দর হয়, কাজেই ধরে নেয়া যায় যে পাখিটি চাল খাচ্ছে সেটা পুরুষ পাখি। গম্ভীর ভঙ্গিতে যে বসে আছে, সে তার স্ত্রী কিংবা বান্ধবী। পক্ষীসমাজে বিবাহপ্রথা চালু আছে কি না মিসির আলি জানেন না। একটি পুরুষ-পাখি একজন সঙ্গিনী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে, না সঙ্গিনী বদল করে - এই ব্যাপারটা মিসির আলির জানতে ইচ্ছা করছে। জানেন না। পক্ষীবিষয়ক প্রচুর বই তিনি জোগাড় করেছেন। বইগুলিতে অনেক কিছুই আছে, কিন্তু এই জরুরি বিষয়টা নেই।
পাবলিক লাইব্রেরিতে পুরানাে একটি বই পাওয়া গেল – ইরভিং ল্যাংস্টোনের “The Realm of Birds', সেখানে পাখিদের বিচিত্র স্বভাবের অনেক কিছুই লেখা, কিন্তু কোথাও নেই একটি পাখি খাবে, অন্যটি দূরে দাঁড়িয়ে দেখবে। রহস্যটা কী? এই পাখিটির কি খিদে নেই? নাকি সে একধরনের উপবাসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে? পক্ষী বিশারদরা কী বলেন? বিশারদদের ব্যাপারে মিসির আলির একধরনের। অ্যালার্জি আছে। বিশেষজ্ঞদের কিছু জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা এমন ভঙ্গিতে তাকান, যেন প্রশ্নকর্তার অজ্ঞতায় খুব বিরক্ত হচ্ছেন। প্রশ্ন পুরােপুরি না শুনেই জবাব দিতে শুরু করেন। সেই জবাব বেদবাক্যের মতাে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের জবাবের উপর প্রশ্ন করা যাবে না। বিনয় নামক সৎগুণটি বিশেষজ্ঞদের নেই। দীর্ঘদিন পড়াশােনা করে তাঁরা যা শেখেন, তারচে’ অনেক বেশি শেখেন – অহঙ্কার প্রকাশের কায়দা-কানুন। পাখির ব্যাপারটাই ধরা যাক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন অধ্যাপকের কাছে গিয়েছিলেন। সেই ভদ্রলােক সমুস্যা পুরােপুরি না শুনেই বললেন, এটা কোনাে ব্যাপার না। খিদে নেই তাই খাচ্ছে না, পশু
হুমায়ূন আহমেদ
পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই।'
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮, নেত্রকোনা জেলায়। তার আত্মজীবনীতে নেত্রকোনার নানান কথা উঠে এসেছে। এমনকি সেখানে তিনি 'শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ' নামে একটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মারা গেছেন: ১৯ জুলাই, ২০১২, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে তিনি লিখেছিলেন 'নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়। ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়।
সন্তান শীলা আহমেদ, নুহাশ হুমায়ূন, নোভা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, নিনিত আহমেদ, নিষাদ আহমেদ। নুহাশ হুমায়ুন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার । তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল 'ইতি তোমারই ঢাকা', 'পেটকাটা ষ' ও 'মশারি'। ২০১৮ সালে 'ইতি তোমারই ঢাকা' নাটকটির মাধ্যমে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ভাইবোন: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, রুখসানা আহমেদ, সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শাহিদ। ভাইবোনদের মধ্যে প্রায় সবাই লেখক। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক। আহসান হাবীব উম্মাদ নামক একটি বহুল প্রচারিত রম্য পত্রিকার সম্পাদক।
জনপ্রিয় উপন্যাসসমূহ:
বাদশাহ নমদার
শঙ্খনীল কারাগার
আগুনের পরশমনি
মেঘ বলেছে যাবো যাবো
বাদশাহ নামদার
অপেক্ষা
নন্দিত নরকে
এইসব দিনরাত্রি সহ আরো আরো অনেক। (যারা হুমায়ূন পাঠে ভীষণ ভীষণ আগ্রহী তারা আরো আরো বইয়ের নাম জানতে চাইলে বই বাজার ডট কমে খুজে দেখতে পারেন। তার সমস্ত বই আমাদের সাইটে পাবেন।) আপনার পড়া হুমায়ূনের বইয়ের নাম আমাদের জানান।
হুমায়ূন পাঠ আপনার সময়কে রাঙিয়ে তুলবে না শুধু, আপনার সময়কে আপনার কাছে নিয়ে আসবে, আপনাকে হাসিকান্নায় মাতিয়ে তুলবে। বই পড়ুন, বইয়ের সাথে থাকুন।