আমার সাহিত্য জীবন -বইয়ের ফ্ল্যাপের লিখা কথা নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিলাম তখন এ কাজ যে কত কঠিন তা ভেবে দেখিনি। লিখতে বসে মনে হচ্ছে এমন কঠিন কাজে হাত না দেওয়াই ভালো ছিল। সহজাত লিখনক্ষমতায় এমন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছেন তিনি। উম্মোচিত হয়েছে তাঁর সৃজনজীবনের অন্দরমহল। সেই সঙ্গে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের শুরু থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্বকে চিনে নেবার আয়াসেও সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য।
...............আমার সাহিত্য জীবন -বইয়ের নিবেদন............... বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে ১৯৯৭ সালে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আমার সাহিত্য-জীবন-এর আকাদেমি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থটির প্রথম পর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে এবং দ্বিতীয় পর্ব ১৯৬২ সালে। আকাদেমি সংস্করণে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব একত্রে গ্রন্থাবদ্ধ হয়েছিল। গ্রন্থদুটি তারাশঙ্করপুত্ৰ সরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পাওয়া গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি এবং তারাশঙ্কর স্মারক সমিতির সমন্বিত উদ্যোগে তারাশঙ্কর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের যে-বর্ষব্যাপী কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল তারই অঙ্গ হিসাবে আমার সাহিত্য-জীবন-এর আকাদেমি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। তারাশঙ্কর স্মারক সমিতির সম্পাদক সবিতেন্দ্ৰনাথ রায়ও সহায়তা দান করেছিলেন। কথাকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তার সারস্বতসাধনার দিনগুলির বৃত্তান্তই উন্মোচন করেননি, তার গদ্যে একটি যুগের আলেখ্যও প্রাণময় হয়ে উঠেছে। বিগত শতকের তিরিশের দশক থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্ব বিষয়ে ধারণা নির্মাণে এ-গ্রন্থ বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে। সুতরাং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একজন কথাকারের সৃজনজীবনের অন্দরে প্রবেশের জন্য শুধু নয়, একটি যুগকে চিনে নেবার আয়াসে সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য। গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ একবছরকাল আগে নিঃশেষিত হয়েছিল। বর্তমান সংস্করণে কিছু সংশোধনের সুযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ-বিষয়ে আমাদের সহায়তা করেছেন তারাশঙ্করের পৌত্র অমলাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। বর্তমান সংস্করণে সংযুক্ত হল আকাদেমি অভিলেখাগারে সংরক্ষিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাণ্ডুলিপির কয়েকটি পৃষ্ঠার অনুলিপি। আকাদেমির প্রকাশনা বিভাগ ও অভিলেখাগারের যেসকল কর্মী গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য পরিশ্রম করেছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানাই।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর লেখায় বিশেষভাবে পাওয়া যায়। বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বােষ্টম, বাউরি, ডােম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছােট বা বড় যে ধরনের মানুষই হােক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম-জীবনের ভাঙনের কথা, নগর-জীবনের বিকাশের কথা। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী। এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।