ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আমাদের চারপাশের চেনা পৃথিবীর অন্তরালে যে রহস্যকাহিনির ঝাঁপিটি লুকিয়ে রয়েছে তার ডালাটিকে খোলার এক দুর্লভ ক্ষমতা রয়েছে নিলয়ের। এই ক্ষমতা ক্রমশ রূপান্তরিত হয়ে যায় গভীর মমতায়। আর তা আমাদের অনিবার্যভাবে স্মৃতিতাড়িত করে, উদ্বেলিত করে। এই তরুণ লেখক আশ্চর্য নিপুণতায় সেসব কাহিনির বুনন করেন। ছোট ছোট বাক্যবিন্যাসে, অপরূপ চিত্রময় বর্ণনায়, চাপা দীর্ঘশ্বাসে, অন্তরমথিত করা অশ্রুপাতের ভেতর দিয়ে সেসব কাহিনি ঘনীভূত হয়ে ওঠে। নিসর্গকে পাঠ করার সংবেদনশীল দৃষ্টি রয়েছে তাঁর। ঝিঁঝিঁডাকা বিস্তীর্ণ মাঠের প্রতি তাঁর প্রবল হাহাকার। পানকৌড়িডোবা বিলের জলজ গন্ধকে প্রবাহিত করতে পারেন বাক্যবিন্যাসে। ছায়াচ্ছন্ন নিবিড় বাঁশ বাগানের ভেতর বাতাসের ফিসফিসানিকে শুনতে পায় তাঁর অনুভূতিপ্রবণ মন। গ্রামের পুরনো দেয়ালের জীর্ণ বাড়ির প্রতি সুগভীর আকর্ষণ অনুভব করেন লেখক। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অকথিত কাহিনিকে তিনি ঐ শ্যাওলাছোপা বিবর্ণ দেয়ালের ভেতর খুঁজে পান।
এ যেন প্রবল আবেগে স্মৃতিতাড়িত হয়ে এক অভিযাত্রায় অবতীর্ণ হওয়া। আটপৌরে জীবনের সুখ-দুঃখ, শোক-তাপ, আশা-আকাঙ্খার বর্ণিল মুহূর্তকে আবিষ্কার। নিলয় নন্দীর গল্পসমূহ পাঠ করে তাঁকে জীবনপথের অনুসন্ধিৎসু পথিক বলে মনে হয়েছে। তাঁর গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে জীবনের সজীবতাকে আবিষ্কার করার প্রবল প্রয়াস।
গল্প ভাবনায় ও প্রকাশভঙ্গিতে নিলয় নন্দী যে দক্ষতা ও শৈলীর পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাঁর প্রতি আমাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমাগতভাবে আত্মআবিষ্কারের পালায় তিনি আগামীতে জীবনের সরল সৌন্দর্যকে উদ্ভাসিত করে আমাদের কথাসাহিত্যের অঙ্গনকে স্নিগ্ধ প্রসন্নতায় সজীব করবেন, এই আমাদের প্রত্যাশা ।