উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক ও চিন্তাবিদ আবুল হাশিমের জীবন ও কর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর লেখা In Retrospection গ্রন্থটিরই অনুবাদ আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি। এটা সার্থক অনুবাদ করেছেন শাহাবুদ্দীন মহম্মদ আলী। গ্রন্থটি আবুল হাশিমের আত্মচরিত নয়, অবশ্য তাঁর পূর্বপুরুষদের কথা, শৈশবকাল, স্কুল ও কলেজ পর্বের খানিকটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় রয়েছে এতে। গ্রন্থটিতে আবুল হাশিমের কর্মবহুল রাজনৈতিক জীবনের প্রসঙ্গই মুখ্যভাবে উঠে এসেছে। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মুসলিম রাজনীতি এবং সেই সঙ্গে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের স্রোত ও অন্তঃস্রোতের ওপর আলোকসম্পাত করতে গিয়ে তাঁর অবস্থানকে তুলে ধরেছেন লেখক। আবুল হাশিমের বর্ণাঢ্য জীবন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির অ্যাডর্ন সংস্করণ এদেশের রাজনীতিসচেতন পাঠকমাত্রেরই বিশেষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আবুল হাশিম
আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪)। জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমানের কাশিয়াড়া গ্রামের এক অভিজাত জমিদার পরিবারে। তাঁর পিতা ছিলেন বর্ধমানের প্রখ্যাত কংগ্রেস নেতা আবুল কাসেম। তিনি বর্ধমানের রাজ কলেজ থেকে বি.এ. (১৯২৮) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল কলেজ থেকে বি.এল. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৬-এ বর্ধমান থেকে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বঙ্গীয় বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। অতঃপর ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৩৮-এ বর্ধমান জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি এবং ১৯৪২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২-তে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। ৫২’র ২০শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য কারাবরণ করেন। অতঃপর খেলাফত রব্বানী পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬০-এ ইসলামিক একাডেমীর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন। আবুল হাশিম ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তার যে বিকাশ ঘটে তার একজন তাত্ত্বিক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : The Creed of Islam (1950), As I see It (1965), Integration of Pakistan (1967) প্রভৃতি।