আলোর ফেরিওয়ালা উপন্যাস মুলত অবহেলিত শিক্ষকদের জীবন জীবীকার
গল্প নিয়ে লেখা। বছরের পর বছর চলে যায়, যুগের পর যুগ, সরকার
বদলায়, পরিবেশ বদলায় কিন্তু এসব শিক্ষকদের জীবনের গল্পটা বদলায়
না।
‘‘আমি যেন সেই হতভাগ্য বাতিওয়ালা
আলো দিয়ে বেড়ায় পথে পথে কিন্তু
নিজের জীবনই অন্ধকারমালা।’’
কবিতার চরণগুলো কবি আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘তালেব
মাস্টার’ থেকে গৃহীত। এই কবিতাটা একজন শিক্ষকের জীবনের করুণ
বাস্তব কাহিনি। কবিতার শেষের দিকে তালেব মাস্টার অনুরোধ করেছেন
তার জীবন কাহিনি নিয়ে কেউ একটা বই লিখুক। বিশেষ করে মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি অনুরোধ করেছেন তালেব মাস্টারকে নিয়ে পদ্মা
নদীর মাঝি’র মত আরও একটি করুণ বাস্তবতার বই লিখতে। জানি
না মানিক বাবু তালেব মাস্টারের কথা শুনেছিলেন কি-না। লেখক চেষ্টা
করেছেন তালেব মাস্টারের শেষ অনুরোধ রাখতে। তালেব মাস্টারের মত
অসংখ্য শিক্ষকদের জীবন জীবিকার করুন বাস্তবতা তুলে ধরতে চেষ্টা
করেছেন।
যুগের পর যুগ চলে গেছে, কত কিছু বদলেছে তবুও তালেব মাস্টারের
মত শিক্ষকদের ভাগ্য আজও বদলায়নি। এসকল আলোর ফেরিওয়ালারা
মানবেতর জীবন যাপন করেন। অনেক শিক্ষক আছেন যারা সারা জীবন
শিক্ষকতা করে বেতনের অপেক্ষায় থেকে থেকে এক সময় বিনা বেতনে
অবসরে গেছেন। সেসকল শিক্ষকদের জীবনের গল্প নিয়েই এই উপন্যাস।
এই উপন্যাসটিতে মুলত বাংলাদেশের অবৈতনিক শিক্ষকদের জীবন
জীবিকা, কমিটির দূনীতি, স্কুল পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা
হয়তো কোনো একদিন এদেশে একজনও অবৈতনিক শিক্ষক থাকবে না।
প্রত্যেক শিক্ষক পাবেন তাদের প্রাপ্ত মর্যদা ও সম্মানী। কিন্তু তালেব
মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টারের মত অসংখ্য মাস্টার যারা বিনা বেতনে
আলো বিলিয়েছেন নিজেদের সুখ বিসর্জন দিয়ে অসংখ্য সূর্য্যমুখীদের
জীবনে; তাদের মধ্যে অনেকেই আজ দেশের বড় বড় আসনে বসে থেকে
দেশ পরিচালনা করছেন। তাদের কি মনে আছে কাদের গাজী স্যারের
কথা? তারা যেন মনে রাখে তালেব মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টারের মত
শিক্ষকদেরকে। যেসকল শিক্ষক বিনা বেতনে অসবর নিয়েছেন তারা
অন্তত মানুষের অন্তরে এতটুকু ভালোবাসার জায়গা করে নিবেন।
কখনো যেনো তাদের ভুলে না যায়।
মুহাম্মদ বরকত আলী
Overall Ratings (0)