আল্লাহর পথে দাওয়াত
বইয়ের নামঃ আল্লাহর পথে দা’ওয়াত প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন মানুষকে আল্লাহ পথে আহবান জানানোর জন্য। আল্লাহর পথে দাওয়াতের প্রথম অর্থই হলো নিজেকে সকল শিরক, কুফরী ও নিফাক থেকে আত্মরক্ষা করে নিজের জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করা যাতে আমার নিজের কর্মের মাধ্যমেও অন্যের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছায়। যেমনঃ নামায, রোযা অন্যান্য ফরযাদিত পালন করে মানুষকে সৎপথে আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ করা, পরিবার ও সমাজের অন্যায়, কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা, কর্মস্থলে অধনীস্থদের সাথে ভালো আচরণ ও তাদের হক আদায়ও আল্লাহর পথে দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত।এককথায়, নিজের সাড়ে ৩হাত বডির উপর আল্লাহর দ্বীন পালন করেই অন্যদের এইপথে আহবান করাই ফলপ্রসু হতে পারে। নামায, রোযার মতই ‘দাওয়াতী কাজ’ একটি বড় ইবাদত।এর পুরস্কারও যেমন বেশি, শাস্তিও কোন আংশে কম নয়। এর পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কে লেখক কুরআন-হাদীস থেকে তুলে ধরেছেন যে, লোকেরা দুনিয়ায় আল্লাহর পথে আহবান করার ফলে দুনিয়ার জাগতিক আজাব-শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে এবং ঐলোকের দাওয়াতে যতজন দ্বীনের পথে আসবে সকলের সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে। আর এইপথে যথাযথ আহবান না করার কারণে পুরো জাতির উপর নেমে আসে আল্লাহর আজাব-গজব। লেখক কুরআন থেকে বলেছেন, ‘ইসরাইল জাতিসহ অনেক জাতিকে আল্লাহর গজব পাকড়া করেছে। এরা একজন অন্যজনকে অন্যায় করতে দেখলে আল্লাহর উস্তাতে নিষেধ করতো কিন্তু পরক্ষণেই, আবার তাদের সাথে উঠা-বসা, কাজকর্ম, ব্যবসা-লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া, সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলতো।’ যা আজ আমাদের এই বর্তমান বিশ্বে চলছে। জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি ইত্যাদি। এমনমানুষ অনেকেই আছেন যারা জানেন দেখছেন যে কাজগুলো অন্যায় কিন্তু এরপরেও দুনিয়াবি সুবিধা পাবার আশাই এর প্রতিবাদ করেন না বরং তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন। বর্তমানের এই ‘করোনা ভাইরাস’ কি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য গজব নয়? অবশ্যই, এটি একটি মহামারী গজব। সৎপথে আদেশ ও অসৎপথে নিষেধ করার চিন্তাধারা আমাদের মধ্যে না থাকার কারণে, অন্যায় দেখেও না দেখার মত করে চলার কারণে- আজ এই গজব আমাদের আপতিত হয়েছে। আল্লাহর এই দ্বীনের পথ আহবান কারীকে দা’য়ী বলা হয়। এই দা’য়ী অবশ্যই কিছু গুনাবলি থাকা আব্যশিক। লেখক কুরআন-হাদীসের আলোকে অনেক গুনাবলির কথা তুলে ধরেছেন। যথাযথ সালাত আদায়ের পাশাপাশি দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য বেশি বেশি কুরআন, তাফসীর, ফিকহ, হাদীস, ইসলামী বই পাঠ করা, সুন্দর আচরণ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে ধৈর্য্যের সহিত আল্লাহর পথে আহবান জানানো দা’য়ীর অন্যতম গুনাবলি। এই সুন্দর গুনাবলি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহবানের এই কাজে বিপদ মুসিবত আসতেই পারে, এটা মাথায় রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর পথে দাওয়াতের এই কাজে অনেকেই অবহেলা করে, বলে-‘ওদের বুঝিয়ে কোন লাভ নেই এরা ফিরে আসবে না।’নবী-রাসূলদেরও দায়িত্ব ছিলো দাওয়াত দেয়া, হেদায়াত দেয়ার তো মালিক ‘আল্লাহ’। আমাদেরও দায়িত্ব হলো- দাওয়াত দেয়া, এইকাজে চেষ্টারত থাকা। কে মানলো না, কে মানলো এটা দেখা আমাদের কাজ না, এটা আল্লাহর দায়িত্ব। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এই দায়িত্ব পালন করতে গিইয়ে যেনো কঠোরতা-উগ্রতা আচরণ না করা হয়, এই কাজের নাম দিয়ে- নিজের ব্যক্তিগত আমলে ত্রুটি বা গাফিলতি না করি। আমি দাওয়াত দিচ্ছি সে কেনো ফিরে আসছে না, আল্লাহ আমার দেয়া দাওয়াত কবুল করছেন না কেনো? বা আমি দাওয়াত দেয়ার কারণে যে আমার উপর চৌড়া হচ্ছে তার উপর আল্লাহর শাস্তি আসছে না কেনো?- এই বিষয়গুলো যাতে দা’য়ীর মন-মস্তিষ্কে না আনেন, তা খেয়াল রাখাও জরুরি। কারণ এইগুলো আল্লাহর বিষয় বা দায়িত্ব। এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই গীবত ও পরনিন্দা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। রাসূল সাঃ যা বলেছেন ও করেছেন তাই সুন্নাত। লেখক বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ কি বলেছেন, আর রাসূল সাঃ করেছেন এর ভিত্তিতেই দাওয়াতী কাজ করতে হবে। কোন বুজুর্গ কি বলেছেন কি করেছেন তা দ্বীনের দাওয়াতের পন্থা নয়। তাই মানুষের কাছে দাওয়াত দিতে হবে কুরআনের আয়াত বলে, সহীহ হাদীসের মাধ্যমে, সুন্দর নসীহতের মাধ্যমে সুন্নত পদ্ধতিতে। নিজের মনগড়া কুরআনের ব্যাখ্যা করে, মনগড়া ও দূর্বল হাদীসের মাধ্যমে, অমুক-তমুক বুজুর্গ এমন বলেছেন বলার মাধ্যমে প্রকৃত আল্লাহর দাওয়াত হয় না। আরেকটা সুন্দর বিষয় লেখক তুলে ধরেছেন তা হলো- বর্তমানে দ্বীনের দাওয়াতের কাজে প্রায় অনেক দল বিভক্তি হয়ে কাজ করছে, কিন্তু আল্লাহ-এক, রাসূল সাঃ-এক ও তাঁদের পথ