“আলেখ্য: জীবনান্দ” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: জীবদ্দশায় তাঁর প্রতিভার যোগ্য সমাদর পাননি জীবনানন্দ দাশ, সামাজিক পরিচয়েও ছিলেন দূরের মানুষ। সহ্য করেছেন অনেকের উপহাস ও উপেক্ষা। অসুখী ব্যক্তিগত জীবন এবং অর্থাভাব তাঁকে তাড়া করেছিল মৃত্যু পর্যন্ত। এই যাঁর জীবন, ট্রাম দুৰ্ঘটনায় গুরুতররূপে আহত হয়ে হাসপাতালের সাধারণ বিছানায় কীভাবে কেটেছিল তাঁর শেষ দশ দিন, কাদের সান্নিধ্য ও শুশ্রীষায়? মাত্র পাঁচটি কবিতার বই এবং দেড়শোর কিছু বেশি কবিতাই ছিল যাঁর জীবৎ তাঁর অসংখ্য অপ্রকাশিত কবিতা এবং অপ্রত্যাশিত গদ্যসম্ভার-গল্প, উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি? এইসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধান এবং জীবনানন্দের প্রশ্নাকীর্ণ জীবন ও সৃষ্টি বিষয়ে এক অসামান্য গ্রন্থ ‘আলেখ্য: জীবনানন্দ’। লেখক বিখ্যাত চিকিৎসক ও সম্পন্ন কবি ভূমেন্দ্র গুহ, পঞ্চাশের দশকের কবিতাপত্র ময়ুখ’-এর সূত্রে জীবনানন্দ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যাঁর গড়ে উঠেছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরই পরিণামে জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে অজানা তথ্য এবং তাঁর অপ্রকাশিত রচনার বিপুল সম্ভার। পাঁচটি অত্যন্ত সংবেদনশীল, বিষয়নিষ্ঠ ও প্রামাণ্য রচনায় সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ নিঃসন্দেহে প্ৰকাশনা।
ভূমিকা: বয়েস যখন অনেক বেড়ে যায়, এবং হাতের কাজও ফুরিয়ে আসে, তখন মানুষকে গল্প বলায় পেয়ে বসে। যার নিজের জীবনে বলবার মতো গল্প জমে আছে, সে সেইসব গল্প খুব আন্তরিকতার সঙ্গে বলে; যার নেই, সে অন্যের কাছ থেকে ধার করে এনে বলে। সেই অন্যকে অবশ্যই গল্পের নায়ক হওয়ার মতো গুণ-নির্তৃণ ধারণ করতে হয়। আমি জীবনানন্দর কাছ থেকে ধার-করা গল্পগুলি বলছিলুম। সেই গল্প বলার কথা কী করে যে মুখে-মুখে রটে গেল, যা আমার অভিপ্রেত ছিল না, এবং শেষ পর্যন্ত শ্ৰী শঙ্খ ঘোষের দরবারে সেই খবর পৌঁছেও গেল। তিনি নিরাসক্ত কণ্ঠে রায় দিলেন যে, গল্পগুলি লিখে ফেলতে হবে, এবং সেই গল্পবিধৃত রচনাটি ‘বিশ্বভারতী’-পত্রিকার “আলেখ্য-বিভাগে গ্রস্থিত হবে। আমি যে সংগ্রহেরাজি হয়েছিলুম, বলতে পারি না; পড়াশোনার বছরগুলিতে সাগ্রহে কোনও পড়া করিনি, মাস্টারমশাইরা তাঁদের মহানুভবতা নিবন্ধন করিয়ে নিয়েছেন। ‘বিশ্বভারতী’-পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক শ্ৰী প্ৰদ্যুম্ন ভট্টাচাৰ্য মহাশয় আমার সেই গল্পবলা লেখাটা, ওঁরা যখন থাকবেন না, আমিও থাকব না...’, নিজগুণে ছেপে দিলেন, এবং আমার বিপদ আরও উসকে দিলেন। একে-একে ‘প্রতিদিন’-পত্রিকার শ্ৰী রবিশংকর বল আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিলেন, মুখ নাকি তেমন ফোটাে জিনিক ছিলনা; বিভাব-পত্রিকার সম্পাদক বন্ধুবর শ্ৰী সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত ত্ৰস্ত নীলিমার থেকে রূপসী বাংলা’, ‘আজকাল’-পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকদ্বয় শ্ৰী শৌনক লাহিড়ি এবং শ্ৰী একরাম আলি তাঁদের অসীম বন্ধুত্বের পীড়নে “ধূসর পাণ্ডুলিপি সারা আকাশ জুড়ে' এবং ‘দেশ”-পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শ্ৰী অমিতাভ চৌধুরী এবং “আমার প্রথম-যৌবনাবধি বন্ধু শ্ৰী দিব্যেন্দু পালিত ‘ধূসরতার সেই খাতাগুলি'। বিপদ, তবু শেষ বিচারে উপভোগ্য তো; এই উপভোগ্যতটুকু দান করেছেন। বলে এঁদের প্রত্যেকেই আমার আশেষ কৃতজ্ঞতাভাজন। কৃতজ্ঞতাভাজন আনন্দ পাবলিশার্স-এর কর্ণধার শ্ৰী বাদল বসু; তিনি অনুগ্রহ করে স্বপ্রণোদনায় তাঁর বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে বইয়ের আকারে গ্রথিত করে গল্পগুলি প্রকাশ করেছেন। আর, যে-সব পাঠক-পাঠিকা বই আকারে বেরোবার আগেই এই লেখাগুলি পড়তে পরিশ্রম ব্যয় করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ।
সূচিপত্র: * ওঁরা যখন থাকবেন না, আমিও থাকব না…১১ * ধূসর পাণ্ডুলিপি সারা আকাশ জুড়ে ২৯ * মুখ নাকি তেমন ফোটোজিনিক ছিল না ৭৯ * ত্ৰস্ত নীলিমার থেকে রূপসী বাংলা ৮৭ * ধূসরতার সেই খাতাগুলি ৯৮