বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন শুধু এদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও নতুন চেতনাপ্রবাহ সৃষ্টি করেছিলাে। এই চেতনা ছিলাে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং সামাজিক মূল্যবােধসঞ্জাত। আমাদের শিল্প সাহিত্যে যারা এই চেতনার ফসল, তাদের ভেতর জহির রায়হানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। কারণ ভাষা আন্দোলনে তিনি শুধু যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তা নয়, তাঁর সাহিত্য প্রেরণার মূল উৎস ছিলাে এই আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের উপর প্রথম সার্থক উপন্যাস আরেক ফাল্গুন'-সহ অজস্র ছােটগল্প ও নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। এইসব লেখা এবং তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
জহির রায়হান
জহির রায়হান : জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষা কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট ও আলিয়া মাদ্রাসায়। ফেনীর আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। তার আগেই কলকাতার বিখ্যাত নতুন সাহিত্য পত্রিকায় ‘ওদের জানিয়ে দাও শিরােনামে তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যােগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জে এ কারদারের সহকারী হিসেবে। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনাে আসেনি' মুক্তিলাভ করে ১৯৬১ সালে।
ছাত্রজীবনেই তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজি পুরস্কার লাভ করেন। পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম' তাঁর হাত দিয়েই তৈরি হয়। ১৯৭০ সালে মুক্তিলাভ করে তাঁর পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া ছবিটি। এটি ছিল এদেশের প্রথম যথার্থ রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ ছবি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৈরি করেন ‘স্টপ জেনােসাইড' ও ‘এ স্টেট ইজ বর্ন ছবি দুটো। এ সময় গঠিত বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তি পরিষদ’ এর তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদ সাংবাদিকঔপন্যাসিক শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। সাহিত্যকর্মের জন্য জহির রায়হান বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭২) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯২) এবং চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় একুশে পদক লাভ করেন (১৯৭৭)।