ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত প্রথম উপন্যাস একটি কালো মেয়ের কথা রচনা করেছিলেন শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয়। কর্তব্যের তাগিদেই, মহান মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে অধুনা বিস্মৃত এই উপন্যাসটি পুনর্প্রকাশিত হলো।
উপন্যাসে পট উন্মোচিত হয়েছে নাজমা নামের একটি মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম কালে ‘স্পাই’ হিসেবে ধরা পড়া ডেভিড আর্মস্ট্রং এর ভারতীয় পুলিশ-অফিসারের সামনে জবানবন্দি উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। জবানবন্দিতে ডেভিড বলেছে : ‘..... এরই মধ্যে এই দেশটাকে এমন করে ভালবেসে ফেললাম যে এই আমার সব থেকে ভোলো দেশ, এর থেকে ভালো দেশ আর নেই। আর এই দেশই আমার দেশ।’
সংগীত শিল্পী ও ট্রানজিস্টার-মেকানিক ডেভিড ভিক্ষাজীবী পিতার কন্যা নাজমার সঙ্গে সঙ্গীত-প্রতিভায় বিমুগ্ধ ছিল। এই নাজমাই পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর তাঁবেদার এক পাঞ্জাবির বলাৎকারের শিকার হয়। নির্যাতিতা ও সন্তানহারা কালো মেয়ে নাজমা ১৯৭১-এর বাংলাদেশের প্রতিরূপক হয়ে উঠেছে উপন্যাসে। তবে, উপন্যাসটিতে ব্যক্তিগত কথকতা ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে পূর্ব বাংলার সমাজ-রাজনীতি, গণহত্যা ও বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ। বলা অত্যুক্তি হবে না যে, উপন্যাসটি বিষয়গৌরবে ঋদ্ধ। বাংলাদেশেল প্রেক্ষণবিন্দু থেকে উপন্যাসটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ-অবলম্বী সাহিত্যের আলোচনায়, পথিকৃৎ এই উপন্যাসটি ‘পরিপ্রেক্ষিত’-এর মর্যাদা পেতে পারে।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর লেখায় বিশেষভাবে পাওয়া যায়। বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বােষ্টম, বাউরি, ডােম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছােট বা বড় যে ধরনের মানুষই হােক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম-জীবনের ভাঙনের কথা, নগর-জীবনের বিকাশের কথা। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী। এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।