আমার বাড়ির সামনে এক প্রশস্ত মেঠোপথ। বৃষ্টির জলে সে পথ যেনো এখন একটা বৃহৎ নদী হয়ে গিয়েছে। যেদিকেই তাকাই আমি সেদিকেই শুধু দেখি পানি আর পানি, সে পানিতে আমি ভেসে যেতে দেখি অসংখ্য মানুষের হৃদয়৷ মানুষগুলো হাঁটু জল পানিতেও নৌকায় করে তাদের ভেসে যাওয়া হৃদয় খুঁজতে নেমেছে৷ ছাঁদে বসে আমি তাদের উন্মাদনায় অস্থির হয়ে যাওয়া করুন মুখখানা দেখি। পুড়তে থাকা হাতের একটা সিগারেট শেষ হতেই আমি তড়িঘড়ি করে আরেকটা সিগারেট ধরাই। ধপ করে লাইটারের মস্তিষ্কে জ্বলে ওঠে আগুন। সেদিকে তাকিয়ে নৌকায় বসে কেউ কেউ আবার হাঁক ছেড়ে জিজ্ঞেস করে বসে, ও মশাই, হৃদয় খুঁজতে নামবেন না? আমি শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে বোবা আর্তনাদ বুকে চেপে নিয়ে হাসি। আকাশ ও আমার দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো তার ক্রুর দৃষ্টি নিয়ে হাসে। সে হাসি হঠাৎ করেই গর্জন করে ওঠে। আকাশে দেখা যায় তার ভয়ঙ্কর রূপ। মানুষের স্রোত বেড়েছে। দলে দলে মানুষ আসছে তাদের হৃদয়ের খোঁজে। আমি আমার বুকের বা’পাশে হাত দিয়ে দেখি সেখানে কোনো শব্দ হচ্ছে কিনা। আকাশে কালো মেঘ করেছে। সে মেঘের পোকারা জল হয়ে দলবেঁধে ছুটে আসছে। আমি সিগারেট হাতে নিয়ে নদীর জলের ভেতর প্রাণপনে দৌঁড়াই। চিৎকার করে বলি, আমি আমার হৃদয় দিবো না, আমি আমার হৃদয় দিবো না। লোকগুলো তাদের উন্মাদনায় অস্থির হয়ে যাওয়া মুখগুলো নিয়ে আমার দিকে তাকায়। আমার হৃৎপিণ্ডের দুই অংশে ভাঙন লেগেছে। লোকগুলো অতিব্যস্ত হয়ে হাত জাগিয়ে আমায় উৎসাহ দিয়ে যায়। আমি শুনতে পাচ্ছি তারা সমস্বরে গলা মিলিয়ে চিৎকার করে বলছে, দৌঁড়াও, তুমি দৌঁড়াও। বৃষ্টির হাত থেকে এ হৃদয়কে তোমার রক্ষা করতেই হবে তুমি দৌঁড়াও। আমি হোঁচট খেয়ে পানির ভেতর উপুড় হয়ে পড়ি। বৃষ্টির পোকারা এসে আমার গা ভাসিয়ে দিয়ে যায়৷ সে স্রোতের দিকে তাকিয়ে আমি দেখি, বৃষ্টির জলে আমার হৃদয়ের পাড় ভেঙ্গেছে। প্রেমিকার ঠোঁটে চুম্বন খেতে যেমন উন্মাদ প্রেমিকেরা ছুটে যায় তেমনি আমার ভাঙ্গা হৃদয়টাও উল্কার বেগে ছুটে যাচ্ছে আরেকটা হৃদয়ের টানে। -আজ বৃষ্টির মন খারাপ পাণ্ডুলিপি থেকে।