ফ্ল্যাপে লিখা কথা মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের চিন্তাধারায় বিশ্বজগতের ঘূর্ণনগতির চিত্র প্রকাশ পেয়েছে যা অন্য কোনো বিজ্ঞানীর চিন্তাধারায় প্রকাশ পায়নি। আইনস্টাইন সার্বিক আপেক্ষিকবাদে মহাকর্ষ সূত্রের যে ঘুর্ণন গতির তথ্য দিয়েছেন, বিশ্বজগৎ সে ঘুর্ণনগতিতে ক্রিয়াশীল। এটা প্রকৃতির এক বিরল ঘটনা ও গতিজগতে অভিন্ন বিধি। এটাই ঐক্যবদ্ধ মতবাদ। কিন্তু আইনস্টাইন এ-তথ্য সার্বিক আপেক্ষিকবাদ বা ঐক্যবদ্ধ মতবাদে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। এখানে সেটা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিকদের সমতলীয় জগতে এবং চিরায়ত বলবিজ্ঞানে গতির বৈখিক ধারণায় সেটা প্রকাশ করা সম।বব হয় নি। চিরায়ত বলবিজ্ঞানের জড়তার সূত্র ও মহাকর্ষ সূত্র একত্র মিলিত হয়ে একটি অভিন্ন সূত্র হবে। এটাই হবে ঐক্যবদ্ধ সূত্র। ঐক্যবদ্ধ মতবাদের ফলে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে ব্যাপক পরিমার্জন প্রয়োজন হবে। বিশ্বজগৎ আইনস্টাইনের চিন্তাধারার উপর পরিচালিত হচ্ছে বিধায় এই বিশ্বকে ‘আইনস্টাইনের বিশ্ব’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আলোচ্য গ্রন্থে বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়েছে।
ভূমিকা মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের চিন্তাধারার সাথে বিশ্বজগতের গতিশীল সংগতি রয়েছে। তিনি সার্বিক আপেক্ষিকবাদে গূর্ণনগতির যে রূপ রেখা টেনেছেন সেভাবেই বিশ্বজগৎ আবর্তিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে কোন বিজ্ঞানীর চিন্তাধারায় বিশ্বজগতের ঘূর্ণনগতির প্রক্রিয়া প্রতিফলিত হয়নি। প্রাচীন গ্রীকদের পৃথিবী ছিল স্থির ও সমতল এবং গণিত ছিল রৈখিক। তাদের মহাকর্ষ ধারণা ছিল না। গ্যালিলিও মহাকাশের ঘূর্ণনগতির তথ্য প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু বলবিজ্ঞানের তা প্রতিফলিত হয়নি। চিরায়ত বলবিজ্ঞানে জড় বল ও মহাকর্ষ বলের আলাদা সূত্র রয়েছে। কাজেই ধরে নেওয়া যায়, চিরায়ত বলবিজ্ঞানে এই দুটোবল বিশ্বকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনস্টাইন নিজের অজান্তে এই দুটো বলকে অভিন্ন সূত্রে আনার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টাই হচ্ছে সার্বিক আপেক্ষিকবাদ। আইনস্টাইন নিজের অলক্ষ্যে সার্বিক আপেক্ষিকবাদে মহাকর্ষকে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। আবার আইনস্টাইন শেষ বয়সে ঐক্যবদ্ধ মতবাদের অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। সেখানে আইনস্টাইন মহাকর্ষ ও দেশকালের বক্রতার সামঞ্জস্য বিধান করতে চেয়েছিলেন। যদিও আইনস্টাইন সঠিকভাবে কাজ করে যেতে পারেননি, তবুও তাঁর একটা উদ্যোগ ছিল।
আইনস্টাইনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ঐক্যবদ্ধমতবাদ। দৃশ্যমান জগতের জন্য ঐক্যবদ্ধ মতবাদ অপরিহার্য। ঐক্যবদ্ধ মতবাদ হচ্ছে এমন একটি মতবাদ, যা বিশ্বের সকল কার্যক্রমের ব্যাখ্যা দিতে পারে (Unification Theory is a complete unified theory that will describe everything in the universe-Hawking, 1988)। এতদিন চলে আসা জড়তার সূত্র ও মহাকর্ষসূত্রকে অভিন্ন রূপ দিতে পারে ঐক্যবদ্ধ মতবাদ। এই অভিন্নরূপকার হচ্ছে মহাকর্ষ। মহাকর্ষ আকর্ষণে গ্রহউপগ্রহ ঘুরছে, ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে, প্রাণীর আবেগ আসছে, প্রজনন ও প্রজন্ম হচ্ছে। মহাকর্ষের ফলে ভূপৃষ্ঠ ফুলেফলে ও তরুলতায় সুশোভিত হচ্ছে। প্রাণীকুল তরুলতা ও ফসলাদি খেয়ে বেঁচে আছে। এ সবই মহাকর্ষের র্কীতি। মহাকর্ষ মহাবিশ্বের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। মহাকর্ষ একক বল, যা মহাবিশ্বের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এই মহাকর্ষের একক নীতি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ নীতি।
নিগেল ক্যালডার কর্তৃক প্যাঙ্গুইন প্রকাশনা থেকে আইনস্টাইনের বিশ্ব নামে একটি পুস্তক প্রকাশ হয়েছে এবং কলকাতা থেকে পুস্তকটি হুবহু বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে। উক্ত পুস্তকে আইনস্টাইনের ধারণাগুলো প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু অত্র পুস্তকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে আইনস্টাইনকে দৃশ্যমান বিশ্বপরিক্রমার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এখানে মোট তেরটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। প্রথম চারটি অধ্যায় ‘আইনস্টাইনের বিশ্ব’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দৃশ্যমান বিশ্বই আইনস্টাইনের বিশ্ব, যা তাঁর সার্বিক আপেক্ষিকবাদের সূত্রাবলীতে আংশিক ফুটে উঠেছে। পঞ্চম অধ্যায়টি বিশেষ ও সার্বিক আপেক্ষিকবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ আপেক্ষিকবাদের ধারণা- গুলোতে মহাকর্ষযুক্ত হয়নি। তাতে করে বিশেষ আপেক্ষিকবাদ চিরায়ত নিয়মেই প্রকাশ করা হয়েছে। অত্র আলোচনায় আপেক্ষিকবাদের ধারণাগুলোর সাথে মহাকর্ষযুক্ত করে পরিস্ফুট করা হয়েছে। এই ধারণাগুলো হচ্ছে, ভরবেগের নিত্যতা, দেশকারের ব্যবধান, জড়ভর ও মহাকর্ষভর, সমতুল্যর নীতি বনাম সমানুপাতিক নীতি, ভর ও ওজন মহাবিশ্বের মডেল, মহাবিশ্বে কার আগমন সর্বপ্রথম প্রমুখ। এইসব ধারণাগুলো বিশ্ব পরিক্রমার সাথে সংগতিবিধান রেখে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতোদিন বিজ্ঞানের অনেক তথ্য ঘটমান পৃথিবীর সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল না, কিন্তু সেসব পরিহার করে সব তথ্য দৃশ্যমান বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে দ্বাদশ অধ্যায় পর্যন্ত বিষয়গুরো ঐক্যবদ্ধ মতবাদের উপাদানগুলোর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ মতাবাদ পাঁচটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এই প৭াচটি উপাদান হলো প্রযুক্ত বল, মহাকর্ষ-অভিকর্ষ, সোয়ার্জচাইন্ড ব্যাসার্ধ, বৃত্তীয় ত্বরণ ও সময়। এই পাঁচটি বিষয় নিয়ে এই অধ্যায় গুলোতে ভিন্ন শিরোনামে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ অধ্যায় হলো পাণিতিক বিশ্লেষণ। এখানে ঐক্যবদ্ধমতবাদের গণিত নিয়ে আলোচনা হলো। পাঠকের কাছ থেকে পুস্তকের কোন সংশোধনের সুপারিশ পাওয়া গেলে, তা অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে সংযোজন করা হবে।
ঐক্যবদ্ধ মতবাদকে তাত্ত্বিকভাবে বুঝতে হবে। প্রাকৃতিক বিধানে গ্রহগুলো সূর্যের চারদিকে এবং উপগ্রহগুলো গ্রহের চারদিকে ঘুরছে। প্রকৃতির এই ঘূর্ণনগতিকে ঐক্যবদ্ধ মাতবাদে সাধারণিকরণ করা হয়েছে। এই তাত্ত্বিক মতবাদের সাথে ঘূর্ণনগতির সূত্র যুক্ত হয়েছে।
এই পুস্তকের উপর তিনটি গবেষণাপত্র ভারত ও পাকিস্তানের তিনটি বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে প্রবন্ধের সাথে পত্রিকার নাম উল্লেখ আছে : (1) Unification of the theory of Albert Einstein by Cyclic theory-Asian Journal of Information and technology. (2) Review of the Theory of Relativity-Journal of Applied Sciences Research. (3) New Aspects of Principle of Equivalence-Acta Cientica Indica. বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (টাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা) বিভিন্ন সেমিনারে এই পুস্তকের উপর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সম্মানিত অংশগ্রহণকারীগণের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকগণের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও পুস্তকটির পান্ডুলিপির প্রয়োজনীয় সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর মোঃ নুরুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শওকত আলী পুস্তকটি রচনার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর মোঃ ইলিয়াছ উদ্দীন বিশ্বাস এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শাহ আলম বইটি রচনার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েচেন। খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ হায়দার আলী বিশ্বাস উল্লেখিত তিনটি গবেষণার সাথে উড়িত ছিলেন। তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পুস্তকটির প্রকাশক জনাব মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশ এবং কম্পিউটার অপারেটর সৈয়দ মোহাম্মদ আলী কবিরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।