আগুনের পরশমণি
বুক রিভিউ : "আগুনে পরশমণি" লেখক :- হুমায়ূন আহমেদ ঘরানা :- উপন্যাস প্রথম প্রকাশ :- ১৯৮৬ পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ৮২ মতিন ও সুরমা সংসার তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে। বড় মেয়ের নাম রাত্রি আর ছোট মেয়ের নাম অপালা। ঢাকায় যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু শুরু ভাব হয় তখন মতিন সাহেবের বাসায় একজন গেরিলা যোদ্ধা আশ্রয় নেয় তার নাম বদিউল আলম বা সবাই ডাকে আলম। মতিন সাহেব জানায় যে তার ভাগিনা দূর সম্পর্কে । কিন্তু সুরমা বেগম প্রথম দিনেই সেটি বুঝতে পারে মতিন সাহেব মিথ্য বলতেছে। কেননা কোন ভাগিনাই তার মামাকে নাম ধরে ডাকবে না। এরপরে নানা কাহিনী ঘটতে থাকে। প্রথমে সুরমা আলমকে মেনে নিতে চাবে মতিন সাহেব সেটি সহজে ভাবেন নাই। তারপরে সুরমা তাকে মেনে নেয়। তাকে একসপ্তাহ পরে চলে যাবার জন্য বলে।রাত্রি প্রথম দিকে আলমের সাথে খুব একটা কথাবার্তা না বললেও পরে রাত্রি আলম সাহেবের সাথে ভাল ব্যবহার ও আচারন করতে থাকে। এরপরে রাত্রি আস্তে আস্তে আলম এর সাথে কথা বলতে থাকে। নানা কারনে অকারনে চা দেওয়ার বাহানায় কথা বলতো। মনে হয় রাত্রি আস্তে আস্তে তারপ্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। রাত্রির ছোট বোন অপালা সারাক্ষণ গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকেন। কোন কোন গল্পের বই তিন চার বার করে পড়ে ফেলেছে অপালা। একবার এক অদ্ভত কান্ড করে বসে অপালা। গল্পের বইয়ে যে নায়িকার নাম থাকে সেগুলো কেটে তার নিজের নাম বসিয়ে দেয় এজন্য তার মা সুরমা তাকে পিটুনি পর্যন্ত দেয়। রাত্রি ও অপালা তার একজন ফুপু আছে।তার নাম হচ্ছে নাসিমা ও তার স্বামীর নাম হচ্ছে ইয়াদ। তাদের কোন ছেলে বা মেয়ে সন্তান নাই। কিন্তু তাদের অনেক টাকা পয়সা। তাদের ফুফা ইঞ্জিনিয়ার। তার ফুপু তাদের দুই বোনকে নিজের সন্তান বলে মনে করে এবং তার বাড়ীতে তাদের দুই বোনের জন্য দুটি রুম বানানো হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন সেখানে থাকে তারা। তার ফুপু রাত্রির জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে শেষ দিকে যখন আলমদের গ্রুপের সবাই একে অপরের সাথে সাক্ষাত হয় তখন তারা আক্রমনের জন্য চেষ্টা শুরু করে। তাদের মধ্যে ছিল সাদেক আশফাক, গৌরাঙ্গ আরও অনেক। তারপরে তারা যেদিন আক্রমন করবে সেদিন আলমের সকাল থেকে কেমন জানি লাগছিল অস্থির। সেদিন সুরমা সকাল বেলা ফজরের নামাজ পড়ে তার মাথায় দোয়া ফুক দিয়ে দেয়। পরে তারা ফার্মগেট এলাকায় কয়েটি অপারেশন পরিচালনা করে সফলভাবে। তারপরে আবার ফিরে এসে পুনরায় যাত্রাবাড়ীর দিকে একটি প্রট্রোল পাম্পে আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন তাদের ধাওয়া করে। তারা পালিয়ে যায়। তারা যখন ফিরে তখন কাটাবনের এখানে পাকিস্তানি সৈনিকরা চেকপোস্ট বসায় সেখানে গোলাগুলি হলে দুজন মারা যায়। ওখানে গোলাগুলি হলে আলম গুলিবিদ্ধ হয়। আরও দুইজন স্পট ডেড। তারপরে আশফাক সাহেবকে পাকিস্তানী আর্মিরা ধরে নিয়ে যায়। সেদিন রাত্রি ও অপালা তার ফুফুর বাসায় যায়। সেখান থেকেই তারা আক্রমনের খবর পায়। তারা বাড়ী আসতে গাড়ী বেড় করলে তাদের গাড়ী ফেরত দেয় পাকিস্তানি সৈনিকরা। রাত্রি তাদের বাড়ীতে ফোন দিয়ে তার মায়ের সাথে কান্না শুরু করে। আলম আসলে তাকে ফোন করতে বলে তার মাকে। এভাবে কয়েকবার রাত্রি তার মাকে ফোন দিয়ে খোজ নিতে থাকে। পরে যখন আরও একবার ফোন করে রাত্রি তখন বলে এসেছে। সে খুব রাগ করে ফোন দেয়নি বলে। অন্যদিকে আশফাককে পাকিস্তানী বাহিনীর লোকজন ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আশফাকে নির্যাতন করতে থাকে। প্রথমে তার দুটি আংগুল ভেঙ্গে দেয় তবুও সে কারও ঠিকানা বলে না। তারপরে আরও তিনটি আংগুল ভেঙ্গে দেয়। তারপরের আশফাক কারও ঠিকানা বলে না। তার পরে তাকে হত্যার নির্দেশ দেয়। আলম যখন বাসায় আসে তখন সে প্রায় অজ্ঞান। তার ডাক্তার ডেকে আনার জন্যও লোক পাচ্ছে না তাছাড়া আবার কার্ফুও শুরু হবে। তাই তাকে অনেক রাত পর্যন্ত ওভাবেই কাটাতে হলো। মতিন ও সুরমা তাকে কয়েক বার পানি খাওয়ালো। রাত্রির শেষের দিকে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই সময় রাত্রিও আর সারা রাত ঘুমাতে পারে না তাই সে বারান্দায় দাড়িয়ে জোনাকি দেখতে থাকে। তার মা বলে আলম সুস্থ হয়ে উঠবে, তার মা তাকে বলে তোর কি মনে হয় তখন রাত্রির জোড়ে কান্না করতে চাচ্ছিল। কিন্তু সেটি করতে পারলো না। তারপরে তাদের মধ্যে নিরবতা। রাত্রির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার মাকে রাত্রিকে চুমু খেয়ে বললো- যুদ্ধ শেষ হলে আমরা আলমের মাকে বলে তাকে চেয়ে নিব। এভাবেই গল্পের শেষ হয়।