ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আধুনিক ইউরোপের ওপর রচিত এটি একটি তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স (সম্মান) ৩য় বর্ষ এবং এমএ পূর্বভাগ ক্লাসের জন্য সিলেবাস অনুসরণ করে গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। গ্রন্থটিতে আধুনিক যুগের শুরু তেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি তথ্যনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটিতে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের সীমারেখা, আধুনিক যুগের উত্তরণ, উত্তরণের কারণ, রেনেসাঁস, ভৌগোলিক আবিষ্কার, ধর্মসংস্কার আন্দোলন, প্রতিসংস্কার আন্দোলন, ইউরোপের শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রগুলোর কালানুক্রমিক বিবরণ সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগবে। বইটি যদি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন মেটায় তাতেই লেখকের শ্রম সার্থক হবে।
ভূমিকা ইতিহাসের ঘটনা একটি প্রবহমান নদীর মতো। ইউরোপের ইতিহাস দীর্ঘ বিবর্তনের মাধ্যমে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নতুন মাত্রা লাভ করে। মধ্যযুগের সামন্তবাদী ধ্যানধারণা এবং ধর্মীয় অন্ধত্ব ইউরোপীয় মনীষাকে পশ্চাৎপদ করে রেখেছিল। সমাজের অধিকাংশ মানুষ ছিল ভূমিদাস। সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ভূলণ্ঠিত হয়েছিল্ ভূম্যধিকারী এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগকারীরা সকল মানুষকে শোষণ করে ইহলৌকিক আরাম-আয়েশ একচেটিয়া করে নিয়েছিল। ১৪৫৩খ্রি. তুর্খিরা কনস্টান্টিনোপল দখল করলে গ্রিক ভাবধারায় স্নাত পণ্ডিতরা ইতালিতে পালিয়ে যায়। বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের ধর্মীয় কর্তৃত্ব রাশিয়ার জারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ইউরোপীয় বাণিজ্য পথ তুর্কিদের কুক্ষিগত হওয়ায় অনেক ইউরোপীয় দেশ সমুদ্রপথে মহাসাগর পাগিড় দিয়ে নতুন নতুন দেশে বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপনে সচেষ্ট হয়। স্পেন ও পর্তুগালের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিষ্টান মিশনারিরা নবউদ্যমে খ্রিস্টধর্ম প্রচারণায় আত্মনিয়োগ করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে স্পেন, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, সুইডেন, ইংল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে শক্তিশালী রাজশক্তি গড়ে ওঠে। ফলে ইউরোপের আধিপত্য নিয়ে এবং ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আধুনিক যুগের শুরুতে ইউরোপে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন ধ্যানধারণা বিকাশের ফলে ধর্মীয় কুসস্কার ও গোঁড়ামির ভিত্তি ভেঙে পড়ে। মানবতাবাদীগণ ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে মানুষকে মুক্তকরার জন্য প্রচলিত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণাকে নতুনভোবে যাচাই করতে শুরু করে। এর ফলে বিশ্বাসের স্থলে যুক্তিবাদ ইউরোপীয় সমগ্র জীবনধারাকে নতুনভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জীবন ভাবনার সাথে পরিচিত হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে ইহজাগতিকতা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ জাগরিত হয়। ফলে মানুষ সামন্তবাদী রাজনৈতিক শৃঙ্খল এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা শুরু করে। বুদ্ধিবাদের প্রভাবে মানুষ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নতুন ধারণা লাভ করে। এর ফলে ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা দেখা হয়। যার মাধ্যমে মানুষ সকল রকমের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হয় এবং নিজকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। ইউরোপের ইতিহাসে মানবজীবনের বহুমাত্রিকতার এই গ্রন্থটিতে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মের পরিবর্তিত রূপ কীভাবে আধুনিক পুঁজিবাদকে বিকশিত করেছিল তার আরোচনা এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সপ্তদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ফ্রান্স ইংল্যান্ড, প্রাশিয়া, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার রাজবংম কীভাবে ইউরোপীয় রাজনীতির গতিধারাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল তার বিবরণ রয়েছে এই গ্রন্থটিতে। আমার রচিত পূর্ববর্তী অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থের মতো এই গ্রন্থটিও যদি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রয়োজন মেটায় তা হলে আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমি খুশি হব। গ্রন্থটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় মতামত ও আদর্শ জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
নিবেদক মোঃ রমজান আলী আকন্দ ইতিহাস বিভাগ সরকারি আযিযূল হক কলেজ, বগুড়া