বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশ ও নজরুল ইসলাম ছাড়াও রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও ফররুখ আহমদ সম্পর্কে বিস্তৃত কাজ করেছেন খ্যাতিমান কবি-কথাসাহিত্যিক- সমালোচক-প্রাবন্ধিক-অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দ (জন্ম: ৩ আগস্ট ১৯৪৩-মৃত্যু: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০)। কিন্তু জসীমউদ্্দীন সম্পর্কেও যে তিনি গভীরতামুখী কয়েকটি সমালোচনা লিখেছিলেন তা অনেকেরই নজরে আসেনি। লেখাগুলো রীতিমতো কৌতূহলোদ্দীপক। বাংলা ভাষার একজন প্রধান কবি হিসেবে বিবেচনা করেই তিনি জসীমউদ্দীনকে নিয়ে লিখেছেন অন্তত পাঁচ-পাঁচটি সম্পন্ন প্রবন্ধ। জসীমউদ্্দীনের কবিতা তাঁর কাছে ‘পাণ্ডিত্যপীড়িত নয়, স্বভাবকবি-শোভনও নয়; ততোটাই আত্মস্বভাবী, যতোটা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়, আবার ততোটা আত্মসচেতন নয়, যতোখানি লোকসাহিত্য’। তাঁর মনে হয়েছিল কোনো তাৎক্ষণিকতা জসীমউদ্্দীনের কবিতাকে তার স্থানচ্যুত করতে পারবে না। কেন তা পারবে না তা অনুভব করা যাবে সংকলিত এইসব রচনার মধ্য থেকে। আবদুল মান্নান সৈয়দের গবেষণাসূত্রে পাওয়া জসীমউদ্্দীনের ইতঃপূর্বে অগ্রন্থিত কবিতাগুলো পাঠকের বাড়তি লাভ। সম্পাদক ও সংকলক আহমাদ মাযহার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর আহমাদ মাযহার (জন্ম: ২৭ মার্চ ১৯৬৩) ছোটদের জন্য গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে প্রথম দিকে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক কালে সমাজ-চিন্তা ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ, সংস্কৃতি-বিষয়ক রচনা ও সাহিত্য-সমালোচনা লিখছেন। অনুবাদ-রূপান্তর ও পুনঃকথনমূলক লেখালিখিও রয়েছে কিছু। বর্তমানে বাংলা শিশুসাহিত্য নিয়ে এবং সাহিত্যপত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিন বিষয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণা করছেন। রচিত-অনূদিত-সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ষাটের বেশি। শিক্ষা ও সংস্কৃতিধর্মী প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গঠনযুগে দীর্ঘ ১৭ বছর যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে চ্যানেল আইয়ে কর্মরত। এছাড়া বইয়ের জগৎ নামে বই-সমালোচনার একটি ত্রৈমাসিক লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছেন।
আব্দুল মান্নান সৈয়দ
সব্যসাচী লেখক হিসেবে খ্যাতিমান আবদুল মান্নান সৈয়দ শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা। কবি ও সমালোচক রূপে তাঁর যশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবেও । আলোড়নসৃষ্টিকারী সত্যের মতো বদমাশ ছিল তাঁর প্রথম কথাসাহিত্যিক প্রয়াস। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একবার আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর একটি গল্পগ্রন্থ পড়ে লিখেছিলেন, ‘বইটি আমার পাঠ-অভিজ্ঞতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘এটি নিছক গল্প-উপন্যাসের বই নয়, একটি পরীক্ষামূলক রচনা, ভেবেচিন্তে লেখা। যেসব রচনা সাহিত্যকে বিস্তৃত করে, পাঠককে শিক্ষিত করে-এই গ্রন্থটি সেই জাতের এবং এই লেখকের সেরকম যোগ্যতা আছে নিঃসন্দেহে।’ নন্দগোপাল সেনগুপ্ত বিশ্বসাহিত্যের অন্যান্য গল্পকারের সঙ্গে মান্নান সৈয়দ-এর গল্প আলোচনা করেছেন। মান্নান সৈয়দ তাঁর অন্যান্য লেখার মতো উপন্যাসেও কখনো এক-জায়গায় থাকেননি, ক্রমাগত নতুন নতুন বিষয় দখল করেছেন। ভাঙা নৌকা দেশবিভাগের পটভূমিকায় লেখা এক অসামান্য নতুন উপন্যাস।