লেখকের নিবেদন এক প্রথমেই স্বীকার করছি যাঁরা বিদগ্ধ, শিক্ষিতমন, ক্ষিপ্রবুদ্ধি ও মার্জিত রুচির অধিকারী, যাঁরা মননশীল সাহিত্যের নন্দনকুঞ্জে মণি-মানিক্য খুঁজে বেড়ান, তাঁরা এ উপন্যাস পাঠ করে হয়তো তৃপ্ত হতে পারবেন না। তবে যাঁরা বৈচিত্র্যের পিয়াসী, যাঁরা প্রেমানন্দের বাগানে বিচরণ করে রসের লাল-নীল গোলাপ আহরণ করে কোঁচড় ভরতে চান- তাঁরা হয়তো কিছুটা সার্থক হবেন। তৃপ্তি পাবেন। কেননা অন্তঃসম্পদহীনা দেহসর্বস্ব রূপসী নারী ও ঢাকা শহরের মতো এ বইয়ে ঐশ্বর্যের চেয়ে চাকচিক্যই অধিক। বহুবর্ণরঞ্জিত উজ্জ্বল মনোহর খেলনার সামগ্রী পেয়ে যারা ঐশ্বর্যের চেয়ে চাকচিক্যই অধিক। বহুবর্ণরঞ্জিত উজ্জ্বল মনোহর খেলনার সামগ্রী পেয়ে যারা ভোলে তুষ্ট হয়- এ বই সেই ধরনের রসাকাঙ্ক্ষী চপলমতি উচ্ছ্বাসপ্রবণ আধুনিক পাঠক-পাঠিকাদের জন্য। তাছাড়া সবাইকে বিদগ্ধ পাঠক-পাঠিকাদের জন্য সাহিত্য রচনা করতে হবে- এমন কোনোf কথা নেই। চলচ্চিত্র-উপযোগী কাহিনী উপন্যাসেরও প্রয়োজন আছে। বেশি মাত্রায় আছে। কেননা পাঠক, সমালোচক, চলচ্চিত্র প্রযোজক উপন্যাস লেকা হচ্ছে না। সুতরাং তাঁদের কথাও লেখকদের ভাবতে হবে। অতএব ক্ষুদ্র বালুকণার মধ্যে বিশ্বরূপ দর্শনের আনন্দময় অভিজ্ঞতা যাঁরা অর্জন করতে চান, তাঁরা বিফল বেদনায় ভরে উঠলে আমি নাচার। তবে সাহিত্যিক ও শৈল্পিক নৈপুণ্য যদি এ গ্রন্থে কিছু থেকে থাকে, তা মূলত: চর্চাগুণের সহজাত কারণে।
দুই শিল্পবস্তুর সঙ্গে শিল্পরীতির সুসঙ্গত সংমিশ্রণের ফলে যে সামগ্রিক ফলশ্রুতির উদ্ভব হয় তাকেই সাহিত্য-অলঙ্কারিকেরা রস বলে আখ্যায়িত করেন। সে রস হলো মধুর রস। কিন্তু আমার এ উপন্যাসে আছে প্রেমরস, আনন্দরস ও হাস্যরস। আসলে জীবন বস্তুটা মোটের উপর খুব মন্দ নয়। ভালো আছে মন্দ আছে, আলো আছে অন্ধকার আছে, হাসি আছে কান্না আছে, প্রেম আছে বিরহ আছে, সুখ আছে অসুখ আছে এবং সবকিছু মিলিয়ে পাল্লাটা ভালোর দিকে ঝুঁকে আছে। জীবনে বৈচিত্র্য আছে- ফলশ্রুতি হিসাবে আছে একটু উদ্বৃত্ত আনন্দ। তাই আমরা জীবনকে শুধ সহ্য করি না, ভালো বাসি। মানুষ শুধু কাঁ না, হাসেও। সুতরাং সব গেল-গেলদের মতো প্রেম আনন্দ বৈচিত্র্য ও হাস্যরসকে আমরা অস্বীকার করবো কেন?