সাহিত্য ও সংগীতের বিভিন্ন দিকে আগ্রহ থাকলেও ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য মূলত একজন গবেষক। ইতােমধ্যে তাঁর বেশকিছু। গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে সিলেটের বাউলসংগীতে শাহজালাল ও চৈতন্যের প্রভাব, বাউল বৈষ্ণব সুফি, বাঙালির নৃতত্ত্ব ও হিন্দুসভ্যতা, আর্য প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। সিলেটের বাউলসংগীতে শাহজালাল ও চৈতন্যের প্রভাব শীর্ষক গ্রন্থে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, নব্যবৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদের মিশ্রণ যেসব অঞ্চলে ঘটেছে, সেসব অঞ্চলেই বাউল, বাওলা বা সে ধরনের মরমীসংগীত সৃষ্টি হয়েছে। বাউল বৈষ্ণব সুফি গ্রন্থে তিনি এই মতবাদগুলাের মধ্যে তুলনামূলক আলােচনা ছাড়াও উল্লেখ করেছেন যে, বড়ু চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি অবৈষ্ণব ...
বিস্তারিত দেখুন
সাহিত্য ও সংগীতের বিভিন্ন দিকে আগ্রহ থাকলেও ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য মূলত একজন গবেষক। ইতােমধ্যে তাঁর বেশকিছু। গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে সিলেটের বাউলসংগীতে শাহজালাল ও চৈতন্যের প্রভাব, বাউল বৈষ্ণব সুফি, বাঙালির নৃতত্ত্ব ও হিন্দুসভ্যতা, আর্য প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। সিলেটের বাউলসংগীতে শাহজালাল ও চৈতন্যের প্রভাব শীর্ষক গ্রন্থে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, নব্যবৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদের মিশ্রণ যেসব অঞ্চলে ঘটেছে, সেসব অঞ্চলেই বাউল, বাওলা বা সে ধরনের মরমীসংগীত সৃষ্টি হয়েছে। বাউল বৈষ্ণব সুফি গ্রন্থে তিনি এই মতবাদগুলাের মধ্যে তুলনামূলক আলােচনা ছাড়াও উল্লেখ করেছেন যে, বড়ু চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি অবৈষ্ণব কবি ছিলেন বলেই তাদের হাতে প্রকৃত অধ্যাত্মরস সমৃদ্ধ কাব্য রচিত হয়নি বা তারা তা করেন নি। চৈতন্য পরবর্তী অন্যান্য। কবি রচিত রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদ অধ্যাত্ম উদ্দেশ্যে রচিত হওয়ার কারণেই পূর্ববর্তী পদ অপেক্ষা স্বতন্ত্র। বাঙালির নৃতত্ত্ব ও হিন্দুসভ্যতা' এবং আর্য’ তার বহুল আলােচিত দুটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থসমূহে তিনি বােঝাতে চেয়েছেন যে, আর্য হিসেবে উল্লিখিত জনগােষ্ঠী ভারতের বাইরে থেকে আগত নয়। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারাের সভ্যতাও যুদ্ধ নয়, প্রবল বন্যাজনিত কারণে ধ্বংস হয়েছে। তবে প্রথমােক্ত গ্রন্থের গুরুত্ব অন্য কারণে। তিনি মনে। করেন, আদি অস্ট্রোলয়েড নামে কথিত নরগােষ্ঠী আফ্রিকা থেকে তৎকালীন স্থল পথে কয়েক সহস্র বছরের চেষ্টায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় আসতেই পারে, তবে তাঁর মতে, যখন পৃথিবীর সবগুলাে মহাদেশ একজায়গায় বা খুব কাছাকাছি অবস্থানে ছিল, তখনই অস্ট্রোলয়েড নরগােষ্ঠীর প্রাণকণা একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ভূখণ্ডগুলাে পরস্পর বিচ্যুত হয়ে স্থানান্তরের সময় ওই প্রাণকণাগুলাে বিবর্তিত হতে থাকে। বিবর্তনের মাধ্যমেই স্ব স্ব ভূখণ্ডে একসময় প্রায় কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের নরবানর ও নরের উৎপত্তি ঘটায়। এসমস্ত অঞ্চলের মানুষের নৃতাত্ত্বিক মিলগুলাের কারণও তাঁর মতে এটাই। উত্তর-আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর এবং উত্তরপশ্চিম ভারতীয় অঞ্চলের নৃগােষ্ঠীর মধ্যেও সমান্তরাল কারণেই মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলে তিনি এই গ্রন্থে অনুমান করেছেন। ভারতীয় বা বাঙালির নৃতত্ত্ব বিশ্লেষণে এটি একটি নতুন ধরনের চিন্তা বলেই মনে হয়।