বীর মুক্তিযাদ্ধো কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম ১৯৪০ সালের ১ মার্চ অখণ্ড ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জে (বর্তমানে জামালপুর জেলা) এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ ও লায়লা জোহরা বেগমের ৭ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। শাফায়াত জামিলের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় বরিশালের ব্রজমাহোন স্কুলে। পিতার বদলী চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোরে কাটে দেশের কয়েকটি জেলায়। ফলে ঢাকা কলেজিয়েট এবং হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে কাটে তার মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন। হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে আই এ ভর্তি হন। এখান থেকেই ১৯৫৯ সালে আই এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালেই তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কাকুল মিলিটারী একোডেমীতে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৬৪ সালের ১৯ এপ্রিল কমিশন এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কমিশন লাভের সঙ্গে সঙ্গে তাকে পোস্টিং করা হয় কুমিল্লায়। চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ৬৫ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও পাকিস্তানের ডেরা ইসলমাইল খানস্থ মিলিটারী পুলিশ (এমপি) একাডেমীর ইস্ট্রাকটরের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন এবং পুনরায় চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে পােস্টিং পান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই রেজিমেন্টে দায়িত্ব পালনরত অবস্থাতেই তিনি তার অধীনস্থ বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে হানাদার পাকিস্তানী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ন'মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ অকুতোভয় বীর বহু অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। এক পর্যায়ে ৭১-এর ২৮ নভেম্বর সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানাধীন ছোটখেল-অপারেশনে শত্রুর গোলার আঘাতে গুরুতর আহত হন। উল্লেখ্য, ৭১-এর মে মাসের মাঝামাঝি তিনি তৃতীয় বেঙ্গলের অধিনায়কত্ব লাভ করেন এবং এই রেজিমেন্টকে তিনি পুনর্গঠিত করেন। স্বাধীনতার পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন এবং লে. কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৭৪ সালে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে পর্যায়ক্রমে রংপুর ব্রিগেড এবং ঢাকায় ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব লাভ করেন। ৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে খুনী মোশতাক সরকারকে উৎখাতের অভ্যুত্থানে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এই অভ্যুত্থানের দায়ে ৭৬-এর ৭ মার্চ জিয়া সরকার তাকে এক সামরিক ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করলে চাকরিচ্যুত হন। অত্যন্ত দৃঢ়চেতা, আপোষহীন এই যোদ্ধা ব্যক্তিগত জীবনে তিন পুত্র সন্তানের জনক।